ব্যবস্থাপক জেলহাজতে, গ্রাহকদের কান্নার রোল
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পাবনা: পাবনার সাঁথিয়ায় জনতা ব্যাংক পিএলসি বনগ্রাম শাখা থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ও সাবেক ব্যবস্থাপক হেমায়েত করিমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ব্যাংক শাখার গ্রাহকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টাকা খোয়া যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকে ব্যাংকটিতে উপচে পড়া ভিড় জমে। কেউ হিসাব যাচাই করছেন, কেউবা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
কীভাবে ফাঁস হয় কেলেঙ্কারি
ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার (১৫ অক্টোবর)। উপজেলার সাগরদারী গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ব্যাপারী ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। ব্যাংকের হিসাবরক্ষক জানান, তার হিসাবে কোনো টাকা নেই। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং চিৎকার শুরু করেন। মুহূর্তেই আশপাশের ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা ব্যাংকে ছুটে এসে নিজেদের হিসাব যাচাই করতে থাকেন। দেখা যায়, অনেকেরই হিসাবে জমা রাখা টাকা নেই বা কম।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জনতা ব্যাংকের পাবনা জেলা অফিসে জানালে সেদিন রাতেই কর্মকর্তারা গিয়ে তদন্তে আত্মসাতের প্রমাণ পান। রাতভর যাচাই-বাছাই শেষে হেমায়েত করিমকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নতুন ব্যবস্থাপক মামলা দায়ের করেন
পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) হেমায়েত করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করে নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. ফরিদুজ্জামানকে। তিনি বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পাবনা আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
গ্রাহকদের অভিযোগে চাঞ্চল্য
বনগ্রামের তনয় ভ্যারাইটিস স্টোরের মালিক তনয় সাহা বলেন, “আমার সিসি লোনের ৪৯ লাখ টাকা হিসাব থেকে উধাও। টাকা উত্তোলনের আগেই আমার মোবাইলে ব্যাংকের মেসেজ সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।”
গরুর ব্যবসায়ী সাগরদারী গ্রামের সালাম ব্যাপারী জানান, “আমার হিসাব থেকে ৪১ লাখ টাকা নেই। এই টাকার শোকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”
আরও অভিযোগ এসেছে—খালইভড়া গ্রামের শাপলা খাতুনের ১৬ লাখ টাকা জমা রশিদ দিলেও তা হিসাব নম্বরে পাওয়া যায়নি; ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিন্টুর হিসাবে ১০ লাখ টাকা উধাও; আব্দুল মতিনের ১২ লাখ ৫০ হাজার, হযরত আলীর ১ লাখ ৫০ হাজার ও আবু জাফরের ৫ লাখ টাকাও আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, “অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে, এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে। প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জনতা ব্যাংক পাবনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মঞ্জুরুল হক জানান, “বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ঢাকা হেড অফিসের প্রতিনিধি দল তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।”
পুলিশের অবস্থান
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, “ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামানের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে হেমায়েত করিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।”
আতঙ্কে সাধারণ গ্রাহক
ব্যাংক ম্যানেজারের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রবিবার সকাল থেকে বনগ্রাম বাজার জনতা ব্যাংক শাখায় শতাধিক গ্রাহকের ভিড় হয়। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নিজেদের হিসাব যাচাই করেন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এত বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ হলেও ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আগে বুঝতে পারেনি—এ বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।