বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: শতবর্ষী ব্যবসায়ী সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন ঘিরে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এক যুগ পর এই নির্বাচনে ফিরেছে সরাসরি ভোটের প্রাণচাঞ্চল্য। আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। দুই শক্তিশালী প্যানেল—‘ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ’ এর লড়াইকে কেন্দ্র করে এখন সরগরম চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল।

দেশের খ্যাতিমান শিল্পোদ্যোক্তা মোহাম্মদ আমিরুল হক ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামক-এর প্যানেল লিডার। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সক্রিয় এই উদ্যোক্তা সিকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সিমেন্ট, শিপিং, এলপিজি, ভোজ্যতেল, চিংড়ি হ্যাচারি ও রিয়েল এস্টেটসহ একাধিক খাতে তাঁর সাফল্য তাঁকে দেশের শীর্ষ শিল্পনেতাদের কাতারে স্থান দিয়েছে। তিনি চিটাগাং চেম্বার ও এফবিসিসিআই-এর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনেরও নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমানে।
শুক্রবার সকালে শাহ আমানতের মাজার জেয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সূচনা করে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম। সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এবং বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম। তাঁদের সরাসরি সমর্থন পাচ্ছে আমিরুল হকের প্যানেলটি। প্যানেলে রয়েছেন পাঁচজন সাবেক পরিচালক—রাইজিং গ্রুপের আমজাদ হোসেন চৌধুরী, ইস্টার্ন গ্রুপের নাসির উদ্দিন চৌধুরী, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান কামাল মোস্তফা চৌধুরী এবং ইনভেস্টর ফ্রেন্ডস সিন্ডিকেটের আমান উল্লাহ আল সগির ছুট্টু।
কৌশলগত প্রচারণায়ও অনেকটা এগিয়ে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরাম। বিশেষত চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী সমাজের যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটিকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম হয়েছেন আমিরুল হক। আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীকে সামনে রেখে বন্দর ট্যারিফ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধতার বার্তা দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি নেভি কনভেনশন হলে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বিশাল ব্যবসায়ীমহলের উপস্থিতি সেই ঐক্যেরই প্রমাণ।
অন্যদিকে, সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন এস এম নুরুল হক, যিনি মোসমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি। তাঁর প্যানেল সমর্থন পাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এরশাদ উল্লাহর। জামায়াত-সমর্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনও রয়েছে তাঁদের পাশে। এই প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন এরশাদ উল্লাহর ছেলে এমাদ এরশাদ।
বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন কেবল নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এটি চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করবে। এক পক্ষ যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত চেম্বার চায়, অন্য পক্ষ সেখানে সংস্কার ও অংশগ্রহণমূলক কাঠামো গঠনের পক্ষে। ফলে এটি হচ্ছে কৌশল, প্রভাব ও ধারণার এক সূক্ষ্ম লড়াই।
আমিরুল হক বলেন, “চেম্বার হবে ব্যবসার স্বার্থে, কোনো রাজনৈতিক ছায়ায় নয়। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।” তাঁর এই অবস্থানই প্যানেলের মূল বার্তা—‘বিজনেস ফার্স্ট’। অন্যদিকে নুরুল হক চান “চেম্বারকে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত করে সদস্যবান্ধব করা” এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সক্রিয় কেন্দ্রে পরিণত করা।
তফসিল অনুযায়ী চার ক্যাটাগরিতে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দুটি ক্যাটাগরিতে প্রার্থী কম থাকায় ছয়জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা অর্ডিনারি ও অ্যাসোসিয়েট গ্রুপে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ এখন তাকিয়ে আছে নভেম্বরের প্রথম ভোরের দিকে—যেদিন ভোটবাক্সে নির্ধারিত হবে শুধু নেতৃত্ব নয়, বরং চেম্বারের ভবিষ্যৎ চরিত্র ও দিকনির্দেশনাও।