নতুন টার্মিনাল ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক, তবে বিদ্যমান বিনিয়োগে ভুল হিসাব রাষ্ট্রীয় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: গ্রিনফিল্ড বা নতুন নির্মাণাধীন বন্দর টার্মিনাল প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্যমান টার্মিনাল, বিশেষ করে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বেসরকারি অপারেটরদের হাতে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশে ভুল হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মো. জাফর আলম বলেন, “গ্রিনফিল্ড (নতুন নির্মাণ) টার্মিনাল আমাদের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এনসিটির মতো টার্মিনাল যদি আমরা দেই অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিতে হবে। কারণ ওখানে আমাদের অনেক বিনিয়োগ আছে। এবং যদি এই হিসাব-নিকাশে ভুল হয় তাহলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে।”
চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবহন পরিচালনা করছে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য প্রবাহ সামলাতে সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে, যার মধ্যে বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর অন্যতম।
বন্দর খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রিনফিল্ড প্রকল্পে বিনিয়োগকারীরা আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নতুন বাণিজ্য রুট ব্যবহারের সুযোগ পান। যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজস্ব প্রবাহ ও ট্রেড দক্ষতা বাড়াবে।
তবে এনসিটির মতো বিদ্যমান (ব্রাউনফিল্ড) টার্মিনাল বেসরকারি হাতে হস্তান্তরের আগে আর্থিক ও নীতিগত বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাবেক এই বন্দর কর্মকর্তা। তার ভাষায়, “সরকার ইতোমধ্যে এনসিটিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে। তাই বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার, রাজস্ব বণ্টন এবং সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন না করলে সিদ্ধান্তটি বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনালে কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি বিনিয়োগ রয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের ক্রেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এই টার্মিনাল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার, আয় ভাগাভাগি কাঠামো, ও দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা নিশ্চিত করা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের জন্য অপরিহার্য, তবে এনসিটির মতো বিদ্যমান সম্পদ বেসরকারি হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সামান্য ভুলও সরকারের জন্য বড় আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের পর্যবেক্ষকদের মতে, “গ্রিনফিল্ড প্রকল্প উন্নয়নের প্রতীক হলেও, ব্রাউনফিল্ড টার্মিনাল হস্তান্তর একটি নীতিগত ভারসাম্যের বিষয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা নিশ্চিত না করে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিলে দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”










