বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ভালোবাসা যখন দেয়াল তোলে, তখন হয়তো কিছু মানুষ সব বাঁধ ভেঙে উড়াল দিতে চায় অসীমের পথে। তেমনি এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ।
মালয়েশিয়া প্রবাসী প্রেমিক সুফিয়ানকে ভিডিও কলে রেখেই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নুসরাত জাহান আঁখি (২৫) নামের এক তরুণী। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে তেঘরিয়া ইউনিয়নের শৈল্যাপাড়া এলাকার এই মর্মান্তিক ঘটনা এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে।
নুসরাত জাহান আঁখি, যার জীবনপ্রদীপ নিভে গেল অসমাপ্ত এক ভালোবাসার গল্পে, তিনি ছিলেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কুসুমদিয়া গ্রামের লিটু কাজীর মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়া প্রবাসী সুফিয়ান (২৮)-এর সঙ্গে আঁখির প্রায় দীর্ঘ দশ বছরের এক গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কৈশোর থেকে তারুণ্য পর্যন্ত বিস্তৃত এই ভালোবাসার বন্ধন ছিলো হয়তো তাদের দুজনের জন্য এক স্বপ্নের জগত। কিন্তু বিধিবাম, এই সম্পর্ক সুফিয়ানের পরিবারের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। পারিবারিক অসম্মতি যেন তাদের ভালোবাসার পথে এক অদৃশ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
শনিবার সকালে সেই অদৃশ্য দেয়াল হয়তো আরও কঠিন হয়ে ধরা দিয়েছিল। ভিডিও কলে কথা বলছিলেন আঁখি ও সুফিয়ান। দুই প্রান্তে হয়তো চলছিল স্বপ্ন আর বাস্তবতার টানাপোড়েন, বোঝাপড়া এবং তার চাইতেও বেশি হতাশার এক কথোপকথন। এই মনোমালিন্যের এক চরম মুহূর্তে, যখন হয়তো সব আশা নিভে গেল, আঁখি এক ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলেন।
প্রেমিকের চোখের সামনেই, ভিডিও কলের জীবন্ত দৃশ্যে, তিনি নিজের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে জীবনের ইতি টানলেন।
আঁখির মা বিউটি বেগম, মেয়ের এমন পরিণতিতে বাকরুদ্ধ, অশ্রুসিক্ত। তিনি বলেন, “ওই ছেলের পরিবার সম্পর্কটা মেনে নেয়নি। মেয়েটা খুব কষ্টে ছিল। অনেক বোঝানোর পরও শেষ পর্যন্ত এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
একজন মায়ের এই আর্তনাদ যেন ভালোবাসার পথে সামাজিক বাধার করুণ পরিণতিই তুলে ধরে। তার কথাগুলো যেন কেবল একটি ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট, আশাভঙ্গ এবং এক মায়ের বুক ফাটা আহাজারি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ প্রক্রিয়া চলছে।
প্রেমের নির্মম পরিণতিতে আঁখির এই আত্মহনন কেবল একটি খবর নয়, এটি সমাজে বিদ্যমান প্রেমঘটিত সম্পর্ক ও পারিবারিক বাধার জটিলতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। ভালোবাসার মানুষটিকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা হয়তো শেষ পর্যন্ত হেরে গেল নিয়তির কাছে, রেখে গেল শুধু একরাশ কষ্ট আর না পাওয়ার বেদনা।










