গাজা ইস্যুতে ক্ষোভ, ‘ট্রাম্প নট ওয়েলকাম’ স্লোগানে মুখর মালয়েশিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুয়ালালামপুর আগমনকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। রাজধানীর মেরদেকা স্কয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শনিবার সকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে কুয়ালালামপুর পৌঁছান। বিমানবন্দরে আনোয়ার ইব্রাহিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিয়ন ইসমাইল তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। ঐতিহ্যবাহী মালয় নৃত্য ও জাতীয় পতাকা ওড়ানো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ট্রাম্প হাসিমুখে অংশ নেন। তবে উষ্ণ আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে রাজধানীর রাস্তায় তৈরি হয় অন্য চিত্র—বিক্ষোভ, ব্যানার আর ক্ষোভের মিছিল।
ট্রাম্পের আগমনের সকালে অ্যমপাং পার্ক এলাকায় বিক্ষোভ আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ সেখানে জড়ো হওয়ার অনুমতি বাতিল করে। এরপর বিক্ষোভকারীরা স্থান পরিবর্তন করে মেরদেকা স্কয়ারে সমবেত হন। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাবলিক অর্ডার রিজার্ভ ইউনিট ও কুয়ালালামপুর স্পেশাল অ্যাকশন ইউনিটের ট্রাকও দেখা যায় শহরের প্রধান সড়কে।
তানজুং মালিম থেকে আসা এক বিক্ষোভকারী, মিথরেয়ার মুত্তুরামালিংগম বলেন, “আমরা অ্যমপাং পার্কে গিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ আমাদের সরিয়ে দেয়। তারা জানিয়েছে, কেউ জড়ো হলে গ্রেপ্তার করা হবে। তাই আমরা অন্যত্র অবস্থান নেই। এতে বিক্ষোভের প্রভাব কিছুটা কমে গেলেও আমাদের বার্তা স্পষ্ট।”
ট্রাম্পের এই সফর তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম উপস্থিতি। এর আগে তিনি ২০১৭ সালে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম এবং ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুর সফর করেছিলেন। মালয়েশিয়ায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের মাত্র তৃতীয় সফর। সর্বশেষ বারাক ওবামা ২০১৪ সালে কুয়ালালামপুরে এসেছিলেন।
তবে এবার ট্রাম্পের আগমন মালয়েশিয়ার জনমনে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনে চলমান যুদ্ধ ও গাজায় হামলার ঘটনায় দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব প্রবল। ট্রাম্পের আগমন উপলক্ষে ২৪ অক্টোবর মার্কিন দূতাবাসের সামনে শত শত মানুষ ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ‘ট্রাম্প নট ওয়েলকাম’ ও ‘হ্যান্ডস অফ প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
‘সলিডারিটি ফর প্যালেস্টাইন’-এর প্রতিনিধি তিয়ান চুয়া মেরদেকা স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বলেন, “আমরা আসিয়ানের নীতি বা শান্তির বার্তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা প্রতিনিধিত্ব করেন, তা শান্তির মূল্যবোধের পরিপন্থী। ইসরায়েল গাজায় বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে, অথচ তিনি তা থামাতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।”
প্রতিবাদকারীরা আরও জানান, ট্রাম্পের উপস্থিতি ‘শান্তি সম্মেলনের’ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। তাঁদের মতে, গাজা ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীরবতা আসিয়ানের নিরপেক্ষতা ও মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য এটি কূটনৈতিকভাবে বড় অর্জন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘর্ষ নিরসনে তাঁর ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। ঐ সংঘর্ষের শান্তিচুক্তি আজই (২৬ অক্টোবর) কুয়ালালামপুরে সাক্ষরিত হওয়ার কথা, যেখানে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষনেতারা।
তবুও রাজধানীর রাস্তায় স্পষ্ট—গাজার আগুন মালয়েশিয়ার জনমনে এখনও প্রজ্বলিত, আর সেই ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।










