Home আকাশ পথ কেনিয়ার আকাশে পর্যটকবাহী বিমান বিধ্বস্ত, জীবনের আলো নিভে গেল সব আরোহীর

কেনিয়ার আকাশে পর্যটকবাহী বিমান বিধ্বস্ত, জীবনের আলো নিভে গেল সব আরোহীর

সংগৃহীত ছবি
এভিয়েশন ডেস্ক: কেনিয়ার ভোর আজ এক বিষণ্ণ নীরবতায় মোড়ানো। সূর্য তখনও পুরোপুরি ওঠেনি, আকাশে হালকা কুয়াশা আর সমুদ্রের ঢেউ তখনো ঘুম জড়ানো। সেই নিস্তব্ধ সকালেই দিয়ানি উপকূলের আকাশে একটুখানি গর্জন তুলে উড়ে গেল একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান, বারোজন মানুষের হাসি, প্রত্যাশা, ছুটি ও স্বপ্ন নিয়ে। মুহূর্তের মধ্যেই সেই হাসিগুলো মিলিয়ে গেল এক দগ্ধ নিস্তব্ধতায়।
সংগৃহীত ছবি
বিধ্বস্তের শোকগাথা

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে পাঁচটার কিছু পরেই বিমানটি দিয়ানি উপকূল থেকে উড্ডয়ন করে মাসাই মারা জাতীয় উদ্যানের দিকে যাচ্ছিল, আফ্রিকার বুনো সৌন্দর্যের এক প্রতীকী গন্তব্যে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই যোগাযোগ হারায় বিমানটি। তারপর হঠাৎ কওয়ালে জেলার পাহাড়ি বনভূমির গভীরে এক বিস্ফোরণের শব্দ, তারপর ধোঁয়া, আগুন আর শোকের ছায়া।

যখন উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছায়, তখন প্রকৃতি যেন নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। গাছপালা কালো হয়ে গেছে আগুনে, ধাতব খণ্ডের পাশে পোড়া লাগেজের গন্ধে বাতাস ভারী। কেউ বেঁচে নেই, শুধু কিছু পোড়া নথি, কিছু গলিত ধাতু, আর দূরে দূরে কিছু হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তের চিহ্ন।

বিমানের কাহিনি

বিমানটি ছিল একটি Cessna Caravan, ছোট কিন্তু নির্ভরযোগ্য পর্যটন উড়োজাহাজ যা প্রায়ই পর্যটকদের মাসাই মারায় নিয়ে যায়। এতে ছিলেন ১২ জন, বিদেশি পর্যটক, স্থানীয় গাইড, দুই ক্রু সদস্য। সবাই ভোরবেলার সেই স্বপ্নযাত্রায় বেরিয়েছিলেন বন্যপ্রাণীর সৌন্দর্য দেখতে, সিংহের রাজ্যে এক দিনের অভিজ্ঞতা নিতে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাদের যাত্রা থেমে গেল আকাশের মাঝপথে।

তদন্তের প্রাথমিক তথ্য

কেনিয়া সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (KCAA) জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দল পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ব্ল্যাক বক্স খোঁজার চেষ্টা করছেন, যেটি হয়তো বলে দেবে শেষ মুহূর্তের সেই নীরব চিৎকারের কথা। ধারণা করা হচ্ছে, খারাপ আবহাওয়া বা প্রযুক্তিগত ত্রুটিই ছিল বিপর্যয়ের মূল কারণ।

প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে

স্থানীয় এক কৃষক জানান, “ভোরে আমরা দেখলাম আকাশে ছোট্ট একটি বিমান খুব নিচুতে উড়ছে, তারপর হঠাৎ তীব্র আওয়াজ আর আগুনের শিখা। আমরা দৌড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আগুন এত ভয়াবহ ছিল যে কিছুই করা যায়নি।” সেই মুহূর্তে হয়তো আকাশ কেঁদেছিল, হয়তো বাতাস স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।

পর্যটনের হৃদয়ে শোক

দিয়ানি থেকে মাসাই মারা রুটটি কেনিয়ার পর্যটনের প্রাণ। প্রতিদিন অসংখ্য বিদেশি ভ্রমণকারী এই পথে উড়োজাহাজে চড়ে প্রকৃতির মহিমা দেখতে যান। আজ সেই রুটটাই শোকের পথ। পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানিই নয়, দেশের ভাবমূর্তিতেও গভীর দাগ ফেলে।

শোকবার্তা ও ভবিষ্যৎ উদ্যোগ

কেনিয়া সরকার নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে। উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা ও বিমান বাহিনী অংশ নিয়েছে। সরকার জানিয়েছে, বিমানের ফ্লাইট রেকর্ডার উদ্ধার করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তদন্ত চালানো হবে। একইসঙ্গে পর্যটন রুটের নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।

শেষ দৃশ্যের নিস্তব্ধতা

দিয়ানি সমুদ্রতটে এখনো ঢেউ আসে, যেমন প্রতিদিন আসে। কিন্তু আজ যেন তারও আওয়াজে বিষণ্ণতা লুকিয়ে আছে। মাসাই মারার প্রান্তরে বাতাস বয়ে যাচ্ছে, হয়তো সেখানে সিংহেরা নিরব অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে, যেখানে আর পৌঁছানো হবে না সেই ১২টি প্রাণের।

কেনিয়ার সেই আকাশ আজ যেন বোঝা হয়ে গেছে শোকের ভারে। যে আকাশ এক মুহূর্তে স্বপ্ন বহন করে, সেই আকাশই পরের মুহূর্তে তা ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। এটাই হয়তো আকাশের নির্মম সৌন্দর্য, আবার মানুষের সীমাহীন অসহায়তাও।