Home Third Lead সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বর্গভূমি বাংলাদেশ: ধর্ম উপদেষ্টা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বর্গভূমি বাংলাদেশ: ধর্ম উপদেষ্টা

‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

রাজনৈতিক প্রভাবই সংঘাতের মূল কারণ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত—এমন মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, “আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি ভারত কিংবা মিয়ানমারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ এখনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বর্গভূমি হিসেবে টিকে আছে। এখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়, বরং রাজনৈতিক স্বার্থ থেকেই অধিকাংশ সংঘাতের উৎপত্তি হয়।”

শনিবার লালমনিরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঐক্যের বার্তা

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ঐতিহ্যগতভাবে সহাবস্থান ও সহনশীলতার উদাহরণ। “আমরা সবাই একসাথে বড় হয়েছি, পড়াশোনা করেছি, মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছি, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে একত্র হয়েছি। তাই এই দেশ আমাদের সবার,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকার এই ন্যায়ভিত্তিক সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উন্নয়ন ও সম্প্রীতির সম্পর্ক

ড. খালিদ হোসেন বলেন, “কোনো দেশে যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকে, সেখানে উন্নয়ন স্থবির হয়ে যায়। বিদেশি বিনিয়োগ ও পর্যটন আগ্রহ কমে যায়। তাই উন্নয়ন ও সম্প্রীতি পরস্পরের পরিপূরক।” তিনি দেশবাসীকে বিভেদ ভুলে উন্নয়ন ও শান্তির জন্য একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

লালমনিরহাটকে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উর্বর ভূমি আখ্যা দিয়ে বলেন, “এখানে মসজিদ, মন্দির ও গীর্জার মধ্যে কোনো বিবাদ নেই। এই বন্ধন আরও শক্তিশালী করতে হবে।” একইসঙ্গে তিনি স্থানীয়ভাবে মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাং ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

রাজনৈতিক বার্তা

লালমনিরহাটে দীর্ঘদিন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা না থাকার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করুন যিনি লালমনিরহাটকে সোনায় মোড়াতে পারবেন। আমরা অভিযোগ নয়, উন্নয়ন দেখতে চাই।”

ইসলামী দৃষ্টান্ত

ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে হাদীস উদ্ধৃত করে ড. খালিদ বলেন, “রাসুল (সা.) যুদ্ধে অংশ নিলেও কখনো নারী, শিশু বা উপাসনালয়ে থাকা মানুষকে আঘাত করার অনুমতি দেননি। এমনকি গাছ কাটা থেকেও বিরত থাকতে বলেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক, জামায়াতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর মো. হাবিবুর রহমান এবং বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এইচ এম বরকতুল্লাহ।

সার্বিকভাবে সভাটি ছিল সম্প্রীতি, দায়িত্ববোধ ও ঐক্যের এক প্রতীকী আহ্বান, যেখানে রাজনৈতিক মতভেদ ছাপিয়ে সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রতিধ্বনিত হয়।