বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ভারতের ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে মঙ্গলবার বিকেলে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালগাড়ির সংঘর্ষে কমপক্ষে ৮ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার ফলে ট্রেনের সামনের কামরা দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। রেলপথের পাশে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তাক্ত দেহ, চোটগ্রস্ত যাত্রীরা রক্তে ভিজে অবস্থান করছেন, আর চারপাশে ছড়িয়ে আছে বোতল, টিফিন বাক্স, রুটি ও তরকারি। অনেক যাত্রী এখনও ভাঙাচোরা কামরার মধ্য দিয়ে প্রাণপণে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন।
দুর্ঘটনা বিলাসপুর-কাটনি সেকশনের লাল খাদান এলাকায় ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লাইনে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়েছিল। সেই সময় কোরবা প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি একই লাইনে চলে আসে। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই ছিল যে ট্রেনের প্রথম কামরা সরাসরি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। স্থানীয়রা সংঘর্ষের আওয়াজ ও যাত্রীদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠান।
বিলাসপুরের পুলিশ সুপার রজনীশ সিং জানান, “এপর্যন্ত মোট সাতজনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ, রেলের কর্মকর্তা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। আহতদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলেই অনেকের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
দুর্ঘটনার জেরে ওভারহেডের বিদ্যুৎ তার ও রেল সিগন্যালিং সিস্টেম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বহু ট্রেন বাতিল হয়েছে এবং কিছু দূরপাল্লার ট্রেন ঘুরপথে চলাচল করছে। রেল কর্তৃপক্ষ মৃতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য, গুরুতর আহতদের ৫ লাখ টাকা এবং সামান্য চোটপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন। জেলা কালেক্টর সঞ্জয় আগরওয়াল জানিয়েছেন, “এখনও দুইজন উদ্ধার কাজে আটকা আছে। ১৬–১৭ জন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এটি একটি বড় দুর্ঘটনা। আমরা উদ্ধারকাজে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।”
চট্টগ্রাম রেলের এক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে যাত্রীবাহী ট্রেনটি লাল সিগন্যাল অমান্য করে এগোনো। ছত্তিশগড়ের উপমন্ত্রী অরুণ সাও জানিয়েছেন, মালগাড়িটি স্থির অবস্থায় ছিল, এবং যাত্রীবাহী ট্রেনটি সরাসরি পিছন থেকে ধাক্কা মারে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির (CRS) পর্যায়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হবে।
এই দুর্ঘটনা ফের রেলের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এবং স্মরণ করিয়েছে ২০২৩ সালের ওড়িশার বালেশ্বরের করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার ভয়াবহ দৃশ্য।










