Home আন্তর্জাতিক নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র: জোহরান মামদানি

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র: জোহরান মামদানি

New York City mayoral candidate Zohran Mamdani, U.S. Senator Bernie Sanders (I-VT) and U.S. Representative Alexandria Ocasio-Cortez (D-NY) wave on stage during a "New York is Not For Sale" rally at Forest Hills Stadium, in the Queens borough of New York City, U.S., October 26, 2025. REUTERS/Eduardo Munoz
মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখলেন জোহরান মামদানি। ২০২৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি নগরীর প্রথম মুসলিম এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এই নির্বাচনে তার জয় শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।

জোহরান মামদানি ১৯৯১ সালে উগান্ডার কামপালায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি এবং মাতা চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নাইর। মাত্র ৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্কে চলে আসেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন, শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে মেইনের বোডইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

জোহরান মামদানি

রাজনীতিতে তিনি ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সাল থেকে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি‑এর ৩৬তম জেলায় (Astoria, Queens) সংসদ সদস্য ছিলেন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ২০২৫ সালের নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে প্রাইমারিতে জয়ী হন, এবং সাধারণ নির্বাচনে জেতার মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করেন।

নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম
মামদানির নির্বাচনী প্রচারনায় মূল ফোকাস ছিল “নাগরিকের জীবনযাত্রার খরচ কমানো” এবং শহরের আর্থ-সামাজিক সমতার উন্নয়ন। তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে:

  • ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও ভাড়া স্থিতি (rent freeze)
  • শহরের গণপরিবহন ও বাস চালনা সাশ্রয়ী বা বিনামূল্যে করা
  • শিশু যত্ন, সস্তা ও শহর পরিচালিত গ্রোসারি স্টোর চালু করা
  • উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা এবং কর্পোরেশন থেকে কর বৃদ্ধি করে সামাজিক সেবা সম্প্রসারণ
সিরীয় স্ত্রী রামা দুওয়াজি ও জোহরান মামদানি।

সাধারণভাবে বলা যায়, তার নীতি সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক সুবিধার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে, যা কর্পোরেট এবং উচ্চ আয়ের নাগরিকদের মধ্যে বিতর্কও তৈরি করেছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে:

  • বাস্তবায়িত নীতিগুলো শহরের জটিল প্রশাসনিক কাঠামোয় কার্যকর করা
  • নিউইয়র্ক সিটির উচ্চমূল্যের আবাসন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং নগর অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করা
  • ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক নীতির মধ্যে সমন্বয় স্থাপন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামদানির জয় আমেরিকার প্রগ্রেসিভ রাজনীতিতে নতুন ধারা হিসেবে দেখা হবে। তরুণ, বৈচিত্র্যময় এবং সোশালিস্ট নীতির প্রতিনিধিত্ব করে তিনি বিশেষ করে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের ভোটারদের মধ্যে সমর্থন অর্জন করেছেন।

অর্থনৈতিক প্রভাব
মেয়র হিসেবে তার নীতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ভাড়া স্থিতি, কর বৃদ্ধি এবং সিটি-রান উদ্যোগগুলো ব্যবসায়িক খরচ বাড়াতে পারে। তবে শহরের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাব্য উপকারও রয়েছে, কারণ সামাজিক সেবা বৃদ্ধি করে কর্মক্ষমতা এবং ভোক্তাসেবা উন্নয়ন সম্ভব।

জোহরান মামদানির জয় নিউইয়র্কের রাজনৈতিক মানচিত্রকে নতুন রূপ দিয়েছে। তিনি শুধু প্রথম মুসলিম বা দক্ষিণ এশীয় মেয়র নন, বরং এমন একজন নেতা, যিনি সামাজিক নীতি, আর্থিক ন্যায্যতা ও নাগরিক সুযোগ সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে শহরের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার নেতৃত্ব নিউইয়র্ক সিটিকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালিত করার সম্ভাবনা রাখে।