মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমার দিন। মুসলমানদের জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিন নয়, এদিন মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও মহামিলনের প্রতীক।
প্রতি শুক্রবার দুপুরে বিশ্বজুড়ে লাখো মুসলমান একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। একই কাতারে দাঁড়িয়ে, একই প্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করেন তারা। ধনী-গরিব, নেতা-কর্মচারী, কৃষক-শ্রমিক, সবাই এক সারিতে মিলেমিশে দাঁড়ান। এই দৃশ্যই ইসলামের সেই মহান বার্তা মনে করিয়ে দেয়, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই সমান আল্লাহর কাছে।
জুমার তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
জুমা শব্দটি এসেছে আরবি “জামাআ” থেকে, যার অর্থ একত্র হওয়া। হিজরতের পর মদিনায় এসে নবী করিম (সা.) প্রথমবারের মতো জুমার নামাজের ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে মুসলিম সমাজে এই দিনটি হয়ে ওঠে সাপ্তাহিক আত্মশুদ্ধি, মিলন ও খুতবার দিন।
জুমার নামাজের আগে মসজিদে দেওয়া হয় খুতবা বা বয়ান, যেখানে আলেমরা ধর্মীয় ও সামাজিক নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এই খুতবা মুসলমানদের জন্য এক প্রকার সাপ্তাহিক শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও দোয়ার সময়
হাদিসে বর্ণিত আছে, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন বান্দার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। এজন্যই এই দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ, কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তেগফার করার পরামর্শ দিয়েছেন নবী করিম (সা.)।
সমাজে জুমার বার্তা
জুমার নামাজ মুসলমানদের সামাজিক সংহতির এক মহান প্রতীক। মসজিদভিত্তিক এই সমাবেশে মুসলমানরা শুধু নামাজই পড়েন না, একে অপরের খোঁজখবর নেন, সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন। এটি সমাজে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্যের বন্ধনকে আরও শক্ত করে।
আধুনিক জীবনে জুমার তাৎপর্য
আজকের ব্যস্ত জীবনে জুমার দিন মুসলমানদের জন্য এক আত্মবিশ্রামের মুহূর্ত। সপ্তাহব্যাপী দৌড়ঝাঁপের পর এই দিনটি মানুষকে থামতে শেখায়, আত্মসমালোচনার সুযোগ দেয়। অনেকে পরিবার নিয়ে একত্রিত হন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সময় কাটান, যা পারিবারিক বন্ধনকেও দৃঢ় করে।
জুমা মুসলমানদের জীবনে কেবল এক দিনের নাম নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। এটি শেখায় একতা, ভ্রাতৃত্ব, দয়া ও ক্ষমা। আজকের দিনে, যখন সমাজে বিভাজন ও বিদ্বেষ বাড়ছে, জুমার এই বার্তাই হতে পারে ঐক্য ও শান্তির আলোকবর্তিকা।










