বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বিড়াল, সেই রহস্যময় প্রাণী, যার চোখে আলো পড়ে যেন গোধূলির নরম দ্যুতি, যার পদক্ষেপ নিঃশব্দ অথচ দুনিয়ার সবচেয়ে স্পষ্ট উপস্থিতি। সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা, চিত্রকলা আর পুরাণে বহু যুগ ধরে এই প্রাণীর অবাধ বিচরণ। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানও যুক্ত হলো সেই শোভার প্রতিযোগিতায়। “গোল্ডেন রেশিও”, অর্থাৎ সৌন্দর্যের সেই গাণিতিক অনুপাতের সূত্র ধরে গবেষকরা বের করেছেন কোন বিড়াল বংশটি সবচেয়ে সুন্দর।
গোল্ডেন রেশিও বা ১.৬২ হলো প্রাচীন গ্রিকদের সেই সৌন্দর্য মাপার সংখ্যা, যা নাকি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা থেকে শুরু করে মিশরের পিরামিড পর্যন্ত প্রায় সব কিছুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে। এই অনুপাতকে ধরেই অনলাইন গবেষক দল ৪৬টি বিড়াল বংশের মুখাবয়ব বিশ্লেষণ করে এক অদ্ভুত তালিকা প্রকাশ করেছে।
বনদেশের রাজকন্যা:
গোল্ডেন রেশিওর সবচেয়ে কাছাকাছি অনুপাত পাওয়া গেছে নরওয়েজিয়ান ফরেস্ট ক্যাট-এর মুখে। যেন প্রকৃতিই তাকে সযত্নে গড়ে তুলেছে উত্তর ইউরোপের অরণ্যের নিঃশব্দ নায়িকা হিসেবে। ঘন রোমশ গলা, ঝুলন্ত লেজ, আর তুষারপাতের মতো কোমল দৃষ্টি—সব মিলিয়ে এই বিড়াল যেন এক বরফঢাকা পরীর প্রতিমা। গবেষকরা জানিয়েছেন, এর মুখের গড় অনুপাত ১.৬৫, যা গোল্ডেন রেশিওর কাছাকাছি এবং “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূর্ণতা”র ইঙ্গিত বহন করে।
রূপালি নিঃসঙ্গতা:
দ্বিতীয় স্থানে এসেছে Russian Blue—একটি বিড়াল, যার চোখে জ্বলজ্বল করে নীলাভ সবুজ দীপ্তি। যেন মেঘলা সকালের আলোয় এক টুকরো ধোঁয়া গলে যাচ্ছে। এই বংশের মুখের অনুপাতও প্রায় নিখুঁত ১.৬৫। বিজ্ঞানীরা বলেন, এর সুষম মুখাবয়ব এবং ধূসর নীল পশমের মসৃণতা মানুষের মস্তিষ্কে “নান্দনিক পরিপূর্ণতা”র অনুভূতি জাগায়। শিল্পীরা বলেন, এটি এমন এক রং, যার সৌন্দর্য শব্দে ধরা যায় না, কেবল আলোয় দেখা যায়।
দ্বীপের রহস্য:
তৃতীয় স্থানে রয়েছে লেজবিহীন দ্বীপের সন্তান, Manx। ব্রিটিশ আইলের এই বংশের লেজহীন দেহ তাকে দিয়েছে এক ব্যতিক্রমী পরিচয়। গবেষণায় দেখা গেছে এর মুখের অনুপাত ১.৫৯, সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে অল্প দূরে হলেও আকর্ষণে কোনো ঘাটতি নেই। প্রকৃতি যেন এখানে কিছু কেটেছে, আবার অন্যখানে দিয়েছে অতিরিক্ত রহস্য।
আরও সুন্দর মুখ
র্যাংকিংয়ে আরও উঠে এসেছে Ragamuffin, Siberian, আর American Curl—যাদের প্রত্যেকের মুখই যেন অনুপাতের নিখুঁত পাঠ। তবে গবেষণার দল নিজেই স্বীকার করেছে, সৌন্দর্য শুধু সংখ্যার খেলায় ধরা পড়ে না; এতে লাগে দৃষ্টির ভালোবাসা আর হৃদয়ের প্রশান্তি।
যখন সৌন্দর্য হয় বিজ্ঞান
এই গবেষণা অনেকটা বিনোদনমূলক হলেও তা একটি বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে, সৌন্দর্য কি কেবল গাণিতিক অনুপাত? না কি সৌন্দর্য হলো সেই মুহূর্ত, যখন কোনো প্রাণী আমাদের দিকে তাকায় আর আমরা নিঃশব্দে মুগ্ধ হয়ে যাই? বিজ্ঞান হয়তো বলবে ১.৬২, কিন্তু হৃদয় বলে, সৌন্দর্যের অনুপাতের মাপ হয় না; তা অনুভূতির পরিমাপে ধরা দেয়।
নরওয়ের বন থেকে রাশিয়ার নীলাভ আকাশ—বিড়ালেরা পৃথিবীর সবচেয়ে কবিতাময় প্রাণী। তাদের চোখে কখনও লুকিয়ে থাকে নক্ষত্র, কখনও বিষণ্নতা, কখনও শান্তি। বিজ্ঞান যতই মাপজোক করুক, এই সৌন্দর্য শেষ পর্যন্ত থেকে যাবে অনুভূতির রাজ্যে। কারণ বিড়াল শুধু সুন্দর নয়—সে এক চলমান রহস্য, এক নীরব কবিতা।










