আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সকালের নিঃস্তব্ধতায় সুইডেনের স্টকহোম কাউন্টির এক গ্রামের প্রান্তে, একজন সাধারণ গৃহকর্তা নেমেছিলেন তাঁর পুরোনো বাড়ির পাশে মাটি খুঁড়তে। উদ্দেশ্য ছিল একেবারে সামান্য, গ্রীষ্মের দুপুরে মাছ ধরতে যাবেন, তার আগে কেঁচো সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু ভাগ্য যেন সেদিন তাঁর হাত ধরে ইতিহাসের দরজা খুলে দিল।
মাটির নিচ থেকে হঠাৎই লোহার মতো ভারী কিছুতে আঘাত লাগল তাঁর খুন্তিতে। কৌতূহলী হয়ে খানিকটা মাটি সরাতেই দেখা দিল এক তামার তৈরি পাত্র। ভিতরটা খুলে তিনি বিস্ময়ে নিঃশ্বাস ফেললেন, রূপার ঝিলিক যেন শতাব্দীর অন্ধকার ভেদ করে চোখ ধাঁধিয়ে দিল। সেই মুহূর্তে তিনি বুঝতেও পারেননি, যে তিনি আবিষ্কার করতে চলেছেন সুইডেনের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ মধ্যযুগীয় ধনভাণ্ডার।
পরে স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক দলের তদন্তে জানা যায়, এটি প্রায় আটশ বছর পুরোনো রূপার সম্পদভাণ্ডার। পাত্রটির ভেতর ছিল হাজার হাজার রূপার মুদ্রা, গয়না, মুক্তা ও অলঙ্কার। এসবের মোট ওজন প্রায় তের পাউন্ড, একেবারে অবিশ্বাস্য পরিমাণ!
বিশেষজ্ঞ সোফিয়া আন্দেরসন জানিয়েছেন, এটি সুইডেনের প্রাথমিক মধ্যযুগের সবচেয়ে বড় রূপার ভাণ্ডারগুলির মধ্যে একটি। তাঁর অনুমান, ওই পাত্রে বিশ হাজারেরও বেশি মুদ্রা থাকতে পারে। প্রতিটি মুদ্রাই যেন একেকটি ইতিহাসের দলিল।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অনেক মুদ্রার গায়ে উৎকীর্ণ রয়েছে “কানুতুস” শব্দটি, লাতিন ভাষায় এটি রাজা নুট এরিকসনের নাম, যিনি দ্বাদশ শতকের শেষ ভাগে সুইডেন শাসন করতেন। আরও আশ্চর্যের বিষয়, সেই সংগ্রহে পাওয়া গেছে বিশপদের বিশেষ মুদ্রাও—যা সাধারণত চার্চের তত্ত্বাবধানে আলাদা করে নির্মিত হতো। একটিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি বিশপের দণ্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন—মুদ্রাটি যেন নিঃশব্দে বলছে, ধর্ম ও রাজশক্তি কত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল সেই সময়ের সুইডেনে।
প্রশাসন এখনো সঠিক স্থানটি গোপন রেখেছে, কারণ সেখানে আরও প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলছে। কিন্তু যা স্পষ্ট, তা হলো—এই রূপার ভাণ্ডার শুধুই ধন নয়, এটি ইতিহাসের এক মহামূল্যবান জানালা।
যে মানুষটি সকালে কেঁচো খুঁজতে নেমেছিলেন, তাঁর চোখে হয়তো এখনো সেই প্রথম রূপার আলো ঝলমল করছে। হয়তো তিনি ভাবছেন, সময়ের বুকে কত গল্প চাপা পড়ে আছে মাটির নিচে—শুধু একটুখানি কৌতূহলই কখনো সখনো সেই গল্পগুলোকে তুলে আনে দিনের আলোয়।










