Home শিক্ষা যৌন হয়রানির অভিযোগ, রাবি শিক্ষকের চেম্বারে তালা

যৌন হয়রানির অভিযোগ, রাবি শিক্ষকের চেম্বারে তালা

সংগৃহীত ছবি

‘তোমার কোমর তো ভালো দোলে’, ‘রাতের রানি’, ‘রাতের গার্ড’

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, বডি শেমিং, অনৈতিক প্রস্তাব ও মামলার হুমকির অভিযোগে স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক এসব অভিযোগকে “বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক” বলে দাবি করেছেন।

সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে তানজিল ভূঁইয়ার চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে দিনব্যাপী বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, এই শিক্ষকের স্থায়ী বরখাস্ত নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষার্থীদের বিস্ফোরক অভিযোগ:
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তানজিল ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য করে আসছেন। এর পাশাপাশি, তিনি অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটু মন্তব্য করার মতো গুরুতর অভিযোগেও অভিযুক্ত।

তৃতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “তিনি নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটু মন্তব্য করেন। যেমন, ‘তোমার কোমর তো ভালো দোলে’, ‘রাতের রানি’, ‘রাতের গার্ড’। আমাদের প্রথম ব্যাচ থেকে এখন সপ্তম ব্যাচ পর্যন্ত অনেকে উনার এমন আচরণের শিকার হয়েছেন।” ওই শিক্ষার্থী আরও যোগ করেন যে, “আগের এক ঘটনায় তিনি শিক্ষার্থীদের মারতে এসেছিলেন, সেই ভিডিওও আমাদের কাছে আছে।”

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে ওই শিক্ষক নাকি শিক্ষার্থীদের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেন। এমনকি তার তাকানোর ভঙ্গিতেও শিক্ষার্থীরা ভয় পায়। তিনি বলেন, “আমরা ক্লাসে যেতেও এখন ভয় পাচ্ছি। তাই আমরা উনার স্থায়ী বরখাস্ত চাই।”

আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানান, তানজিল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মারতে আসা ও মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তিনি এক সময় নিজের বিভাগেরই এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেন এবং এরপর তার স্ত্রীও সহপাঠীদের নানা হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন মেহেদী। এসব গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা বিভাগের পক্ষ থেকে তার স্থায়ী বরখাস্ত দাবি করছেন।

শিক্ষক তানজিল ভূঁইয়ার পাল্টা দাবি:
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী অধ্যাপক তানজিল ভূঁইয়া জানান, শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগগুলো করেছে, তার একটিও সত্য নয়। তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ “সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক”।

তানজিল ভূঁইয়া ঘটনার সূত্রপাত ব্যাখ্যা করে বলেন, “ঘটনার শুরু আমাদের প্রথম ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে। এক ট্যুরে ওই শিক্ষার্থী মেয়েদের রুমে কয়েকজন ছেলে নিয়ে মাদক সেবন করছিল। আমি গিয়ে বাধা দিই। সেই ঘটনাতেই সে আমার নামে এসব ছড়াচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেন, “তার পাশাপাশি সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভাগের অন্যদের উসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব করছে।”

শিক্ষার্থীদের মারমুখী হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তানজিল ভূঁইয়া বলেন, “আমি বলেছিলাম, যদি আমার স্ত্রীর কিছু হয়, তাহলে মামলা করব— এর বাইরে কিছু না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। যদি প্রমাণ থাকে, তাহলে সেটা সামনে আনুক।”

শিক্ষার্থীদের তীব্র বিক্ষোভ এবং শিক্ষকের অস্বীকারের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।