কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু এই বাজারের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আমদানিকৃত গাড়ির প্রকৃত মান কতটা নির্ভরযোগ্য, আর রিকন্ডিশনিং প্রক্রিয়ায় কতটা স্বচ্ছতা আছে? অনেক ক্রেতাই আজও জানেন না, তাদের কেনা গাড়িটি আসলে কতটা ব্যবহৃত, কী অবস্থায় আমদানি হয়েছে, কিংবা সেটির পূর্বের দুর্ঘটনার ইতিহাস কী ছিল।
জাপান থেকে আসা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মান যাচাই পদ্ধতি আছে। জাপান অটো অকশন বা বিভিন্ন অনুমোদিত সংস্থা গাড়িগুলোর জন্য গ্রেড নির্ধারণ করে, যেমন ৪.৫, ৪ বা ৩.৫ যা গাড়ির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা, ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা এবং মাইলেজ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে বাংলাদেশে গাড়ি পৌঁছানোর পর এই তথ্যগুলো সবসময় ঠিকভাবে যাচাই করা হয় না। অনেক সময় নথিপত্রে ‘মাইলেজ টেম্পারিং’ বা ‘অডোমিটার রোলব্যাক’ করা হয়, অর্থাৎ চালানো কিলোমিটার কম দেখানো হয়। এতে ক্রেতা ভেবে নেন, গাড়িটি কম ব্যবহৃত, অথচ বাস্তবে সেটি অনেক পুরনো।
রিকন্ডিশনিং প্রক্রিয়াটিও অনেক সময় কেবল বাহ্যিক রূপসজ্জায় সীমাবদ্ধ থাকে। ডেন্টিং-পেইন্টিং করে, সিট কাভার ও টায়ার পাল্টে গাড়িটিকে নতুনের মতো বানানো হয়, কিন্তু ইঞ্জিন, ব্রেক বা সাসপেনশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশে ত্রুটি থেকেই যায়। ফলে ক্রেতা কয়েক মাস ব্যবহারের পরই নানা যান্ত্রিক সমস্যায় পড়েন।
অভিযোগ আছে, কিছু আমদানিকারক ও ডিলার ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির আসল অকশন শিট পরিবর্তন করে দেন। এতে গাড়ির আসল গ্রেড, মাইলেজ বা দুর্ঘটনার ইতিহাস গোপন থাকে। এই কারণে জাপানি গাড়ির “রিকন্ডিশন্ড” মানে অনেক সময় শুধুই নামমাত্র পুনঃসংস্কার, বাস্তবে তার অবস্থা হয় অনেক নিচু মানের।
বাংলাদেশে বর্তমানে কোন সরকারি সংস্থা সরাসরি গাড়ির মান নিয়ন্ত্রণ করে না। আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস-এর কিছু সীমিত পরিদর্শন থাকলেও তা প্রযুক্তিগতভাবে অপর্যাপ্ত। ফলে বাজারে স্বচ্ছতা বাড়াতে একটি জাতীয় মান যাচাই ব্যবস্থার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রির আগে বাধ্যতামূলক ‘ইন্সপেকশন রিপোর্ট’ দেওয়া হয়, যাতে ইঞ্জিন, ব্রেক, ব্যাটারি, সাসপেনশনসহ প্রতিটি অংশের অবস্থা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশেও যদি এমন একটি ডিজিটাল যাচাই ব্যবস্থা চালু করা যায়, তাহলে ক্রেতারা প্রতারণা থেকে অনেকাংশে বাঁচতে পারেন।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মান নিয়ন্ত্রণ শুধু ক্রেতা স্বার্থেই নয়, বরং দেশের সড়ক নিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্যও জরুরি। নিন্মমানের বা অনির্ভরযোগ্য গাড়ি সড়কে নামলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে, এবং দূষণও বেড়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত একটি আধুনিক যানবাহন মান নিয়ন্ত্রণ নীতি তৈরি করা, যেখানে প্রতিটি আমদানিকৃত গাড়ির জন্য বাধ্যতামূলক প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন ও সত্যায়িত সার্টিফিকেট থাকবে।










