Home কক্সবাজার টেকনাফ উপকূলজুড়ে অবৈধ বাণিজ্যের নয়া কৌশল: ডাল ও সিমেন্টের ট্রলার জব্দ

টেকনাফ উপকূলজুড়ে অবৈধ বাণিজ্যের নয়া কৌশল: ডাল ও সিমেন্টের ট্রলার জব্দ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই মাদক, স্বর্ণ ও মানবপাচারের রুট হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ রুটে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারে এখন শুধু মাদক নয়, নির্মাণসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও পাচারের চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার কোস্টগার্ডের হাতে বিপুল পরিমাণ ডাল ও সিমেন্ট জব্দের ঘটনাটি সেই বাস্তবতারই নতুন প্রমাণ।

কোস্টগার্ডের অভিযানটি হয় বুধবার দিবাগত রাতে সেন্টমার্টিন ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায়। ‘জয় বাংলা’ নামের টহল জাহাজের সদস্যরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুটি সন্দেহজনক ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে ৬০০ বস্তা মটর ডাল ও ৬৫০ বস্তা সিমেন্ট জব্দ করেন। এ সময় ২২ জনকে আটক করা হয়। আনুমানিক বাজারমূল্য ৩৩ লাখ টাকারও বেশি।

সাধারণত মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা জলসীমায় ছোট আকারের মাছ ধরার ট্রলার ব্যবহার করে এ ধরনের পাচার করা হয়। কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, পাচারকারীরা ট্রলারগুলোকে মাছ ধরার আড়ালে ব্যবহার করে বৈধ বাণিজ্যের মতো দেখাতে চায়। ডাল, চাল বা সিমেন্টের মতো পণ্য পরিবহনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে দুই দিকের কর ফাঁকি এবং অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট ও ডাল পাচারের পেছনে দুটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে, এক, মিয়ানমারে এসব পণ্যের ঘাটতি ও উচ্চমূল্য; দুই, সীমান্ত অঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিত জলপথ ব্যবস্থাপনা। ফলে চোরাকারবারিদের জন্য এটি লাভজনক ও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ রুটে পরিণত হচ্ছে।

অর্থনৈতিকভাবে এমন পাচার রাষ্ট্রের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি বৈধ ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কারণ পাচারকারীরা কোনো শুল্ক বা কর না দিয়ে বাজারে পণ্য সরবরাহ করে, যা মূলত বৈধ আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে।
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের নন-মাদক পাচারের আড়ালেও প্রায়ই মাদক বা অস্ত্র লেনদেনের কার্যক্রম লুকিয়ে থাকে। একবার পণ্যবাহী ট্রলারের ওপর আস্থা তৈরি হলে পাচারকারীরা সেটিকে অন্য অবৈধ পণ্যের রুট হিসেবেও ব্যবহার করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোস্টগার্ডের টহল ও নজরদারি কার্যক্রম বেড়েছে। আধুনিক জাহাজ সংযোজন ও গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় বৃদ্ধির কারণে একাধিক বড় পাচার অভিযান সফল হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল জব্দ অভিযানই যথেষ্ট নয়, পাচারের মূল চক্র, অর্থ লেনদেন ও স্থানীয় সহযোগীদের আইনের আওতায় না আনলে সমস্যাটি টেকসইভাবে কমবে না।

সেন্টমার্টিন উপকূলে ডাল ও সিমেন্ট জব্দের ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অভিযান নয়; এটি উপকূলীয় অর্থনীতিতে অবৈধ বাণিজ্যের নতুন ধারা উন্মোচন করেছে। সমুদ্রপথে পণ্য পাচার রোধে নিয়মিত নজরদারি, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সচেতন করাও জরুরি। না হলে ভবিষ্যতে এ রুটটি আরও বড় অপরাধ চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।