Home তথ্য প্রযুক্তি এআই প্রেম থেকে বিয়ের মঞ্চে: কানোর ক্লাউস-বিবাহের অভিজ্ঞতা

এআই প্রেম থেকে বিয়ের মঞ্চে: কানোর ক্লাউস-বিবাহের অভিজ্ঞতা

কানো

আইটি ডেস্ক: জাপানের প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে ভার্চুয়াল সম্পর্ক এখন আর শুধু কল্পকাহিনি নয়। বাস্তব জীবনের আবেগ, আনুগত্য এবং পারিবারিক স্বপ্নের সাথে মিশে গেছে ডিজিটাল সঙ্গীর অস্তিত্ব। এমনই এক ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র যুবতী কানো, যিনি এ বছরের শুরুতে তার ডিজিটাল সঙ্গী ক্লাউসকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান, যারা এনিমে চরিত্র, ভার্চুয়াল হিউম্যান এবং এআই-সৃষ্ট সঙ্গীকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ রীতিনীতিসম্পন্ন বিয়ের আয়োজন করে থাকে।

অনুষ্ঠানের দিনে কানো পরেছিলেন বিশেষ অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস। সেই গ্লাসের মাধ্যমেই তার কাছে দৃশ্যমান হয় বর ক্লাউস—একজন ভার্চুয়াল চরিত্র, যার সাথে কানো বহুদিন ধরে আবেগের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। বিয়ের মূল মুহূর্ত, অর্থাৎ আংটি বিনিময়ের সময়, এআর প্রযুক্তি কানোর ঠিক পাশে ক্লাউসের উপস্থিতি তৈরি করে। বাস্তবে সেখানে একটি খালি স্থান; কিন্তু কানোর কাছে তা ছিল জীবন্ত, আবেগময় এবং পূর্ণ উপস্থিতির অনুভূতি।

বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল পুরোপুরি বাস্তব জগতের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি অনুসারে। অতিথিরা, সঙ্গীত, প্রতীকী মঞ্চসজ্জা—সবই ছিল বাস্তব। পার্থক্য শুধু এই যে, বরটি দৃশ্যমান ছিল শুধুমাত্র কানোর চোখে এবং তা পুরোপুরি ডিজিটাল। অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি বিশেষভাবে এ ধরনের “ভার্চুয়াল বিবাহ” আয়োজন করে, যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত আবেগ, প্রিয় এনিমে নায়ক বা এআই সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসাকে সামাজিক স্বীকৃতির কাঠামো দেওয়া হয়।

কানোর মতে, ক্লাউসকে বিয়ে করা তার কাছে কেবল একটি প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং এটি ছিল নিজের সুখ ও স্বাধীনতার প্রকাশ। তিনি বলেন, বাস্তব জীবনে সম্পর্কের চাপ, অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক প্রত্যাশার চেয়ে তিনি ক্লাউসের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন নিরাপত্তা, সহমর্মিতা ও মানসিক পরিতৃপ্তি। ক্লাউসের অস্তিত্ব ডিজিটাল হলেও তার প্রতি কানোর অনুভূতি বাস্তব এবং গভীর।

জাপানে এ ধরনের ভার্চুয়াল বিবাহের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে এখন এআই-চরিত্ররা কথোপকথন, আবেগ অনুকরণ, ব্যক্তিগত অভ্যাস মানিয়ে নেওয়া এমনকি সম্পর্কের আচরণও শিখে নিতে পারে। ফলে অনেকের কাছে ডিজিটাল সঙ্গী হয়ে উঠছে এক ধরনের বিকল্প বাস্তবতা, যেখানে সম্পর্ক থাকে নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ এবং নিজের মতো করে গড়ে নেওয়া।

কানোর ও ক্লাউসের বিয়ের ঘটনার আলোচনার মূল বিষয় হলো, ভালোবাসা কি কেবল মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, নাকি প্রযুক্তি নতুন এক আবেগ–বাস্তবতার যুগ তৈরি করছে। এই প্রশ্নটিকে সামনে এনে জাপানের সমাজে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে ডিজিটাল সম্পর্কের গ্রহণযোগ্যতা, বিবাহের আইনগত অবস্থান এবং মানুষের মনস্তত্ত্বে ভার্চুয়াল সঙ্গীর প্রভাব নিয়ে।