হেলথ ডেস্ক: সাধারণভাবে ব্যবহৃত ব্যথানাশক আইবুপ্রোফেন থেকে শুরু করে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, এ ধরনের বেশ কিছু প্রচলিত ওষুধ ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ও এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১৩ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যতথ্য বিশ্লেষণ করে এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক, কিছু ভ্যাকসিন, অ্যান্টিভাইরাল এবং প্রদাহনাশক ওষুধ (anti-inflammatory drugs) ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে। বিশেষভাবে হেপাটাইটিস এ, টাইফয়েড ও ডিপথেরিয়া ভ্যাকসিন ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি প্রায় ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম বলে পর্যবেক্ষণে পাওয়া গেছে।
সংক্রমণ থেকেই ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত?
গবেষণা দল জানিয়েছে, গবেষণার ফলাফল সেই তত্ত্বকে শক্তিশালী করে যে কিছু সাধারণ ধরনের ডিমেনশিয়া ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণে শুরু হতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের গবেষক ড. বেন আন্ডারউড বলেন,
“ডিমেনশিয়ার গতি কমাতে বা প্রতিরোধে নতুন চিকিৎসার খোঁজ এখন অত্যন্ত জরুরি। যদি এমন ওষুধ পাওয়া যায় যা আগে থেকেই বাজারে আছে ও নিরাপদ—তাহলে সেগুলোকে পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে দ্রুত রোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, বাজারে থাকা এসব ওষুধের খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবায়, বিশেষ করে এনএইচএসের মতো সরকারি ব্যবস্থায়, অনুমোদন পাওয়া সহজ হতে পারে।
বিপরীত চিত্র: কিছু ওষুধে বাড়তে পারে ঝুঁকি
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অ্যান্টিসাইকোটিক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার বাড়তি ঝুঁকির যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তবে গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, এই সম্পর্ক কারণ-প্রভাব নয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, যাদের ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ থাকে, তারা অনেক সময় মুড পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট পেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে ওষুধ নয়, বরং ডিমেনশিয়াই প্রধান কারণ।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইলিয়ানা লৌরিদা বলেন,
“কোনো ওষুধের সঙ্গে ঝুঁকির যোগসূত্র পাওয়া মানেই এই নয় যে ওষুধটি ডিমেনশিয়ার কারণ বা প্রতিরোধক। ডায়াবেটিস ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়—তাই ডায়াবেটিস রোগীরা ঝুঁকিতে থাকবেনই; ওষুধ নয়, মূল রোগই ঝুঁকির উৎস।”
ডিমেনশিয়া: যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য–সামাজিক সংকট
যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, যা দেশটির প্রধান মৃত্যুহার-সম্পর্কিত রোগের শীর্ষে। এখন পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধে কোনো অনুমোদিত চিকিৎসা নেই। নতুন কিছু ওষুধ (যেমন লেকানেমাব, ডোনানেমাব) রোগের গতি কিছুটা কমালেও সেগুলো এনএইচএসে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট কার্যকর বলে মনে করা হয়নি।
আলঝাইমার্স সোসাইটির ড. রিচার্ড ওকলে বলেন,
“আজ জন্ম নেওয়া প্রতি তিনজনের একজন জীবনে কখনো না কখনো ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হবেন। যদি প্রচলিত ও নিরাপদ ওষুধগুলোকেই নতুনভাবে ব্যবহারযোগ্য প্রমাণ করা যায়, তবে তা সময় ও অর্থ—দুয়োই বাঁচাবে এবং আমাদের দ্রুত সমাধানের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।”
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Alzheimer’s and Dementia: Translational Research and Clinical Interventions জার্নালে।










