আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল-খুমস উপকূলে আবারও ঘটেছে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনা। ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসনের চেষ্টা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ডুবে যায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী দুটি নৌকা। দুদিন পর শনিবার লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট উদ্ধার অভিযান শেষ করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে। এতে চার বাংলাদেশির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উদ্ধারকর্মীদের বরাতে জানা গেছে, সাগরে নৌকা ডুবির খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে তারা দুটি আলাদা নৌকার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। প্রথম নৌকাটিতে মোট ২৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের সন্ধানে অভিযান চলছে। উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানা যায়নি।
দ্বিতীয় নৌকাটিতে ছিলেন মোট ৬৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। এর মধ্যে দুজন মিসরীয় এবং বাকি ৬৭ জন সুদানি নাগরিক। তাদের মধ্যে আটজন শিশু ছিল। নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর কিছু যাত্রীকে সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও অনেকেই এখনও নিখোঁজ। উদ্ধার হওয়া কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধার দলের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে ওঠে। তীব্র ঢেউ ও প্রবল বাতাসের কারণে নৌকাগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং কিছুক্ষণের ব্যবধানে উল্টে যায়। রাতের অন্ধকার, উত্তাল সমুদ্র ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে প্রাথমিক উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হয়।
লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী সন্দেহ করছে, মানবপাচারকারী চক্রই এই দুটি নৌকা সাগরে নামিয়েছে। পাচারকারীরা ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব হতদরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। নিখোঁজদের খোঁজে লিবিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দূতাবাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। নিহতদের পরিবারকে সহায়তার বিষয়েও সরকার উদ্যোগ নেবে বলে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসন রুট। প্রতি বছরই এ পথে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। আল-খুমস উপকূলে সাম্প্রতিক নৌকাডুবি আবারও প্রমাণ করল, ইউরোপমুখী এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা এখনো কতটা প্রাণঘাতী।
উদ্ধারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, নিখোঁজদের মধ্যে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে। উত্তাল সমুদ্র পরিস্থিতি অনুসন্ধান অভিযানকে আরও কঠিন করে তুলছে।










