বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই অঘোষিত ৬৩ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। চলতি নভেম্বরের মধ্যেই এসব আসনে দল ও জোটের প্রার্থী ঠিক করে ঘোষণা দিতে চায় তারা। বিষয়টি শুধু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়; বরং নির্বাচনী মাঠে বিএনপির কৌশলগত অবস্থানও অনেকাংশে নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জোট শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শিগগিরই ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত মিত্রদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে প্রার্থী তালিকা নেয়া হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী মহল জানিয়েছে, শরিকদের প্রস্তাবিত তালিকা যাচাই–বাছাই করে প্রাথমিক শর্টলিস্টও তৈরি হয়েছে।
সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী নিবন্ধিত দলগুলোকে নিজেদের প্রতীকে ভোট করতেই হবে। ফলে শরিক দলের পরিচয়, প্রতীক এবং মাঠের গ্রহণযোগ্যতা—সবকিছু মাথায় রেখে আসন বণ্টন করতে হচ্ছে বিএনপিকে। এই নতুন বাস্তবতা তাদের আগের কৌশলে পরিবর্তন আনে। বিশেষ করে জামায়াতসহ ইসলামি ধারার দল ও বাম ঘরানার যেসব সংগঠন নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা চলছে, তাদের অবস্থানও সমীকরণে গুরুত্ব পাচ্ছে। নিবন্ধিত দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকের বাধ্যবাধকতা বিএনপিকে আরও সতর্ক করছে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে।
ঘোষিত ২৩৭ আসনের মধ্যে সীমিত কয়েকটিতে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সরাসরি মাঠে নেমেছে। স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা না মিটলে মনোনীত প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ঢাকায় ডেকে এনে সমঝোতা করানো হচ্ছে। কুমিল্লা–৯ আসনে মো. আবুল কালাম ও সামিরা আজিম দোলার বিরোধ মেটাতে গত শুক্রবার এমন উদ্যোগ নিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। দলের আশা, বাকি আসনগুলোর বিরোধও দ্রুতই সমাধান হবে। তবে প্রয়োজনে খুব সীমিত সংখ্যক আসনে পরিবর্তন আনা হতে পারে।
এ মুহূর্তে বিএনপির ওপর সবচেয়ে বড় চাপ এসেছে শরিক দলের পক্ষ থেকে। বিএনপির ঘোষিত তালিকায় একক প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে, ফলে মিত্ররা চাইছে দ্রুত সিদ্ধান্ত। ইতোমধ্যে সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন নজরুল ইসলাম খান। নিবন্ধনহীন দলগুলো বিশেষভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে তাদের ‘সময় বাঁচানো’ জরুরি বলে। বিএনপিও তাদের আশ্বস্ত করেছে, সবকিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে ২২টি আসন ছাড়লেও এবার তাদেরই অনেক জায়গায় বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে আগের মতো বড় পরিসরে ছাড় নয়; বরং স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতা ও বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় শরিক নির্ধারণ করা হবে। বিএনপির একটি অংশ বলছে, এ নির্বাচনে শরিকদের জন্য ২৫ থেকে ৩০টি আসন ছাড়ার কথাই ভাবছে দল।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শরিকদের সঙ্গে আলোচনার প্রায় সবটিই শেষ পর্যায়ে। বিএনপি যে আসন দেবে তারা ঘোষণা করবে, আর যেগুলো বিএনপি নিজেরা লড়বে তারও ঘোষণা শিগগিরই আসবে। তিনি বলেন, দলীয় বিরোধ যেখানে দেখা দিয়েছে, সেগুলো সমঝোতার মাধ্যমে দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যেই সব মনোনয়ন কাজ শেষ করার আশা করছেন তিনি।
২৩৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা এবং ৬৩ আসনের সিদ্ধান্ত মিলিয়ে বিএনপি নির্বাচনী প্রস্তুতির নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। শরিকদের সঙ্গে সমন্বয়, আরপিওর বাধ্যবাধকতা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে তাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবার অনেক বেশি জটিল হলেও দলটি চায় নভেম্বরেই সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির এই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে তারা মাঠে কতটা শক্ত অবস্থানে থাকতে পারবে।








