Home অন্যান্য বৃষ্টির দিনে দেখা: পর্ব-৪

বৃষ্টির দিনে দেখা: পর্ব-৪

লকেটের রহস্য

স্মৃতি হাসান

পূর্ণিমার রাতের সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্ত থেকে অনুপম এবং মেয়েটি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ছুটতে লাগল।
পিছনে শোনা যাচ্ছে পায়ের আওয়াজ—একটি অজানা ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগোচ্ছে।

মেয়েটি কণ্ঠ কাঁপিয়ে বলল,
“অনুপম, তুমি লকেটটা হাতে নিয়েছো তো?”

অনুপম কাঁপা গলায় বলল,
“হ্যাঁ, কিন্তু এর মধ্যে কি আছে? আমি কি বুঝব?”

মেয়েটি চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নিল।
“এটা শুধু একটি ধাতব জিনিস নয়…
এই লকেটের ভেতরে আছে আমাদের অতীতের সব স্মৃতি, এবং একটি সত্য যা কেউ জানলে বিপদ তৈরি হতে পারে। যদি এটি ভুল হাতে পড়ে, শুধু আমার নয়, তোমার জীবনও ঝুঁকিতে পড়বে।”

হঠাৎ অনুপমের মনে ভেসে উঠল—কিশোর বয়সের স্মৃতি।
পতেঙ্গা সৈকতের সেই বিকেল, যখন সে মেয়েটিকে প্রথমবার দেখেছিল।
তখন সে বলেছিল,
“যদি কখনো হারিয়ে যাও, আমি একটি জিনিস দেব, যা আমাদের স্মৃতিকে ধরে রাখবে।”
কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে লকেটটি সেই মুহূর্তে দিতে পারেনি।

তারা দৌড়ে চলতে চলতে পৌঁছাল একটি পুরনো, ভাঙাচোরা বাড়ির কাছে।
মেয়েটি হালকা হাওয়ায় কেঁপে উঠল।
“আমরা এখানে কিছুক্ষণ থামতে পারি। তারা হয়তো আমাদের খুঁজতে কিছুটা সময় নেবে।”

অনুপম লকেট খুলল। অল্প আলোয় দেখা গেল ছোট একটি ছবি—একটি ছেলে, এক মহিলা এবং একটি অজানা প্রতীক।
“এই কি সেই সত্য?” অনুপম ফিসফিস করে বলল।

মেয়েটি কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“হ্যাঁ। এবং এর সূত্র আমাদের অতীতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যারা খুঁজছে, তারা জানে লকেটটি কার হাতে উঠলে কার ক্ষতি হতে পারে।”

ঠিক সেই মুহূর্তে—পিছন দিক থেকে সেই ছায়া আবার এগিয়ে এলো।
মেয়েটি অনুপমকে টেনে ধরে বলল,
“দৌড়াও! এখনই না হলে আমাদের আর সুযোগ থাকবে না।”

দৌড়ন্ত পথের মধ্যে, তারা লক্ষ্য করল—জঙ্গলের চারপাশে বাতির আলো একেবারে নিভে গেছে।
চাঁদের আলো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

অনুপমের হৃৎপিণ্ড দ্রুত ধকধক করছে।
মেয়েটির হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“যখন তুমি সত্য জানতে চাও, তখনই বিপদ সবচেয়ে কাছে আসে।
কিন্তু আমি জানি, তুমি আর থামবে না।”

দৌড়ের সময় হঠাৎ অনুপমের চোখে ঝলক লাগল—
ছায়ামূর্তির হাতে লকেটের একটি অংশ ধরা। সে খুব দ্রুত এগোচ্ছে।
“সে আমাদের ধরে ফেললেই সব শেষ!” অনুপম চিৎকার করে বলল।

মেয়েটি হালকা হাসি দিয়ে বলল,
“ভয় পেয়ো না। আজ আমরা বাঁচতে পারব, কিন্তু সত্য জানার জন্য আমাদের আরও সাহসী হতে হবে।”

যখন তারা একটু নিরাপদ জায়গায় থামল, মেয়েটি লকেটটি অনুপমের হাতে ধরাল।
“এখান থেকে যাত্রা শুরু। লকেটের ভেতরে যে তথ্য আছে, তা শুধু আমাদের স্মৃতি নয়। এটি এমন এক রহস্যের সূত্র যা আমাদের জীবনের পথ পরিবর্তন করবে। কিন্তু যারা আমাদের খুঁজছে, তারা খুবই শক্তিশালী। আমরা একা নই, কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে।”

পিছন থেকে আবার পায়ের আওয়াজ।
এবার আরও বেশি কাছ থেকে।
অনুপম এবং মেয়েটি একসাথে তাকাল, তাদের চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।
লকেট এখন শুধু একটি জিনিস নয়—এটি তাদের ভেতরের সাহস, অতীত এবং ভবিষ্যতের একটি চাবি।

পূর্ণিমার রাত শেষ হওয়ার আগে, লকেটের রহস্য এবং বিপদের মুখোমুখি হওয়া—সব মিলেমিশে অনুপমের জীবনকে এক নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তী পর্বের জন্য আগামীকাল ভিজিট করুন: businesstoday24.com