Home Third Lead কৃষকের জন্য সরকারি বরাদ্দের সার কোথায় যাচ্ছে?

কৃষকের জন্য সরকারি বরাদ্দের সার কোথায় যাচ্ছে?

শেরপুরে এক কীটনাশক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ১০৬ বস্তা সরকারি সার জব্দ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি বরাদ্দকৃত সার কালোবাজারে পাচারের ঘটনা ধীরে ধীরে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পাবনা ও দিনাজপুরে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন যে সরকারি মূল্যে বরাদ্দকৃত সার তারা পাচ্ছে না, অথচ তা অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

খুলনায় কালোবাজার ও চুয়াডাঙ্গায় জব্দ

খুলনার বিভিন্ন ঘাটে খালাস হওয়া ইউরিয়া সার প্রতিনিয়ত কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে খুলনার ঘাটগুলোতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫০ টন সার খালাসের জন্য অপেক্ষা করছে। চারটি জাহাজে দেশে এসেছে সার — অলিম্পিয়া লগার, গ্লোবাল এম্বিশন, নিকোলাস এ ও লটিকা নারি। সামিট অ্যাসোসিয়েটস দেশের ৩৪টি গুদামে এসব সার বিতরণ করছে, আর পরিবহণে জড়িত আছে জুয়েল ট্রান্সপোর্ট।

তবে সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোষ্টবিহার গ্রাম থেকে ২০ টন সার উদ্ধার করা হয়। সারবোঝাই ট্রাকটি স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম রেজার গুদামে যাচ্ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত শামীম রেজাকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, ব্যবসায়ী বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি, তাই জরিমানা করা হয়েছে।

খুলনার শিরোমনি ঘাটের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ট্রান্সপোর্ট মালিক ও গুদামের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ থাকে। ২০ টনের একটি ট্রাক সার কালোবাজারে বিক্রি করলে কমপক্ষে ৮ লাখ টাকা লাভ হয়, যা ভাগাভাগি করা হয়।”

অন্যান্য অঞ্চলে কালোবাজারি ও অভিযান

দিনাজপুর: সদর উপজেলার মাস্তান বাজার এলাকায় ডিলার আবেদুল ইসলাম বরাদ্দকৃত সার কৃষকদের না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করছিলেন। এক ট্রাক্টর আটক হয়, চালক স্বীকার করেন যে সার ডিলারের নির্দেশে পাচার হচ্ছিল। কৃষকরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।

মেহেরপুর: গাংনী উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ী থেকে সরকারি বরাদ্দকৃত সার পাচারের সময় আটক হন। অভিযানে ১৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগ ছিল, তারা সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছিল।

পাবনা: ভাঙ্গুড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৬ বস্তা ডিএপি, ৭ বস্তা ইউরিয়া ও ২ বস্তা পটাশ সার জব্দ করা হয়। ডিলারকে জরিমানা করা হয়। কৃষকরা সরকারি বরাদ্দ সার না পাওয়ায় বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় সরকারি বরাদ্দকৃত সার অবৈধভাবে বিক্রি করার অভিযোগে পাঁচজন দোকানদারকে জরিমানা করা হয়েছে।

প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য

সামিট অ্যাসোসিয়েটসের ম্যানেজার মো. শামীম আহসান বলেন, “জুয়েল ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে আমরা সার গুদামে পৌঁছে দিই। যে ট্রাক চুয়াডাঙ্গায় গেছে, সেটিও তাদের। তবে ডিলার স্বীকার করেছে যে সার তার, তাই আমরা পরিবহণ কোম্পানিকে দোষী বলতে পারি না।”

বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) সেরনিয়াবাত রেজাউল বারী বলেন, “আমরা দেখি চাহিদা অনুযায়ী মাল গুদামে পৌঁছেছে কি না। সামিট অ্যাসোসিয়েটস জানিয়েছে, তারা চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করবে। তাই বিষয়টি নিয়ে আর তদন্ত হয়নি।”

সরকারি বরাদ্দ সার কালোবাজারে বিক্রি হওয়া শুধু কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও সংকট সৃষ্টি করছে। প্রকৃত কৃষকরা সরকারি মূল্যে বরাদ্দকৃত সার না পেয়ে বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনকে কঠোরভাবে বাজার তল্লাশি, গুদাম ও পরিবহণ চেইন পর্যবেক্ষণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সিন্ডিকেটে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।