বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার বহু বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে এগুলো এখনো সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য বিকল্প। কিন্তু বিশ্বের অটোমোবাইল শিল্প বদলে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। বৈদ্যুতিক গাড়ি, হাইব্রিড প্রযুক্তি, স্মার্ট সেফটি ফিচার এবং কঠোর পরিবেশ মানদণ্ড, সব মিলিয়ে গাড়ির ভবিষ্যৎ আর আগের মতো নেই। সেই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠে এসেছে, বাংলাদেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারের পরবর্তী দশক কেমন হবে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের গাড়ি ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং একই সঙ্গে বড় সুযোগও। বর্তমানে সরকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ওপর শুল্ক কাঠামো পর্যায়ক্রমে পুনর্বিবেচনা করছে, যাতে বাজারে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব গাড়ির প্রসার বাড়ে। বিশ্বব্যাপী এখন যে গাড়িগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক। জাপানসহ অনেক দেশ ধীরে ধীরে পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ি বাদ দিয়ে পরিবেশবান্ধব মডেলের দিকে এগোচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বাজারে এসব প্রযুক্তির রিকন্ডিশন্ড সংস্করণও আসতে পারে।
তবে এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নীতিমালার স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল সিস্টেম জরুরি, যেখানে প্রতিটি গাড়ির আসল অকশন শিট, দুর্ঘটনার ইতিহাস, মাইলেজ, নির্গমন মান এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাই করা হবে। এছাড়া ক্রেতাদের জন্য ‘ভেহিকল হিস্ট্রি রিপোর্ট’ বাধ্যতামূলক করলে প্রতারণা অনেকটাই কমে আসবে।
ভবিষ্যতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চার্জিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার। বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয় করতে হলে শহর ও মহাসড়কজুড়ে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় অটোমোবাইল শিল্পকে উৎসাহ দিলে সাশ্রয়ী ইভি অ্যাসেম্বলি এবং স্পেয়ার পার্টস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এটি কর্মসংস্থানও বাড়াবে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি হয়ে উঠেছে। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে নয়, বরং প্রযুক্তিগত মান, নিরাপত্তা ফিচার এবং পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য দেখে গাড়ি কেনার প্রবণতা তৈরি করতে হবে। মিডিয়া, অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারি সংস্থাগুলো যৌথভাবে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার সামনে একটি রূপান্তরের সময়ের মুখোমুখি। নীতি, প্রযুক্তি ও পরিবেশ—এই তিনের সমন্বয়ে যদি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতের যানবাহন বাজার হবে আরও নিরাপদ, টেকসই ও আধুনিক। রিকন্ডিশন্ড সেক্টর সেখানে তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে, তবে সেটি হবে নতুন প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণের আলোকে আরও স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল।










