আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরব হজযাত্রীদের তীব্র গরম থেকে রক্ষা এবং পুরো হজ যাত্রাকে আরও নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে বিশ্বের প্রথম ‘কুলিং ইহরাম’ উদ্বোধন করেছে। হজ মৌসুমে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ বিবেচনায় পোশাকটির আবিষ্কারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি কুলিং ইহরাম দেখতে ঐতিহ্যবাহী ইহরামের মতোই। তবে এর মূল পার্থক্য এর উপাদান ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যে। এতে ব্যবহৃত বিশেষ ফ্যাব্রিক সূর্যের তাপ ও আলো প্রতিফলিত করতে সক্ষম। ফলে যাত্রীদের শরীরে সরাসরি তাপের চাপ কম পড়ে এবং দীর্ঘসময় প্রখর রোদে বাইরে অবস্থান করলেও শরীর তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কাপড়টি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে বায়ু চলাচল সহজ হয় এবং ঘামের সংস্পর্শে দ্রুত শুকিয়ে যায়। এতে পোশাক ভারী হয় না বা দেহে আঠালো ভাব সৃষ্টি করে না, যা তপ্ত আবহাওয়ায় হজযাত্রীদের জন্য বড় আরামের বিষয়। হজের সময় আরাফাত, মিনা, মুজদালিফার মতো খোলা স্থানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশনসহ নানা শারীরিক ঝুঁকি দেখা দেয়। কুলিং ইহরাম সেই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হজযাত্রীদের মধ্যে তাপজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার নজরে আসার পর সৌদি সরকার নানামুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে। পানির স্টেশন বৃদ্ধি, ছায়াযুক্ত বিশ্রাম কেন্দ্র তৈরি, স্মার্ট হজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার পর এবার পোশাকের প্রযুক্তিগত উন্নতি সেই উদ্যোগেরই অংশ। কুলিং ইহরামকে একইসঙ্গে মানবিক ও প্রযুক্তিগত দুই দিক থেকেই একটি নতুন মানদণ্ড বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাজারে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত সংখ্যক কুলিং ইহরাম সরবরাহ করা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, তাপ কম অনুভব হওয়ায় দীর্ঘসময় হাঁটা এবং ভিড়ের মধ্যে চলাচল আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। তাদের ভাষায় এটি শুধু পোশাক নয়, বরং চরম গরমে টিকে থাকার একটি কার্যকর সরঞ্জাম।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তাপমাত্রা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে হজ পরিচালনায় প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। কুলিং ইহরাম সেই বৃহত্তর অভিযোজন প্রচেষ্টারই একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে এর সঙ্গে আরও সেন্সরভিত্তিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা স্মার্ট হেলথ মনিটরিং যুক্ত হতে পারে।
সৌদি আরবের এই উদ্ভাবন শুধু হজযাত্রীদের আরামই দেবে না, বরং তাপ-সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য ভবিষ্যতে নতুন ধরনের নিরাপদ পোশাক তৈরির পথও খুলে দেবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।










