Home Second Lead সকালের ভূমিকম্প কেন, কোথা থেকে হলো?

সকালের ভূমিকম্প কেন, কোথা থেকে হলো?

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা:  সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশে হঠাৎ করে মাটি কেঁপে ওঠে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৫ থেকে ৫.৭। এপিসেন্টার ছিল নারসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলা থেকে মাত্র ২৭-৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, গভীরতা মাত্র ১০ কিলোমিটার। এত কম গভীরতার কারণে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় কম্পন বেশ তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে।

কেন হলো এই ভূমিকম্প?

ভূ-তাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষস্থলে অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতি বছর ৪-৫ সেন্টিমিটার হারে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘সাবডাকশন’। এর ফলে প্লেটের ভিতরে প্রচণ্ড চাপ জমতে থাকে। যখন এই চাপ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন ফল্ট লাইন বরাবর হঠাৎ করে শক্তি নির্গত হয়—যাকে আমরা ভূমিকম্প বলি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকের ভূমিকম্পটি মাদুপুর ফল্ট বা তার আশপাশের কোনো স্থানীয় ফল্ট লাইনের স্ট্রেস রিলিজের ফল। এটি কোনো মানুষসৃষ্ট কারণে (যেমন গ্যাসক্ষেত্র বা জলাধার) হয়নি। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৫৮টি মাত্রা-৪ বা তার বেশি ভূমিকম্প হয়, যা এই টেকটোনিক কার্যকলাপেরই ফল।

কোথায় কোথায় কম্পন অনুভূত হয়েছে?

  • নারসিংদী: এপিসেন্টারের কাছাকাছি হওয়ায় সবচেয়ে তীব্র কম্পন (মার্কেলি স্কেলে VI)
  • ঢাকা: বারিধারা, গুলশান, বনানী, মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ প্রায় পুরো শহরে ৮-১৫ সেকেন্ড ধরে দোলা অনুভূত
  • বগুড়া: ১৬২ কিলোমিটার দূর থেকেও ২০-৩০ সেকেন্ড কম্পন
  • গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ: মাঝারি কম্পন
  • পশ্চিমবঙ্গের শান্তিপুরসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় হালকা কম্পন

প্রাথমিক খবরে কোনো হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ আতঙ্কে বাড়ি-অফিস থেকে রাস্তায় নেমে আসে। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি এবং ভূমিকম্পের জোন-২-এ অবস্থিত। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, বিল্ডিং কোড না মানা, নরম মাটির ওপর অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং পুরোনো ভবনের কারণে ভবিষ্যতে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ হতে পারে।

আজকের এই ঘটনা যেন আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, প্রস্তুতি ও সচেতনতার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।