Home First Lead রাজধানীতে বহুতল ভবনে ফাটল: ভূমিকম্পে নতুন আতঙ্ক

রাজধানীতে বহুতল ভবনে ফাটল: ভূমিকম্পে নতুন আতঙ্ক

ছবি: এ আই

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আজ সকাল ১০:৩৮-এ নারসিংদীকেন্দ্রিক ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানীতে বড় ধরনের ধ্বংসাবশেষ না থাকলেও, একাধিক বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ফাটলগুলোই এখন ঢাকাবাসীর নতুন উদ্বেগের কারণ। ফায়ার সার্ভিস ও বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অন্তত ১২টি বহুতল ভবনে স্পষ্ট বা সূক্ষ্ম ফাটল ধরা পড়েছে।

যেসব ভবনে ফাটল দেখা গেছে (নিশ্চিত তালিকা)

  • খিলক্ষেত: ১৮ তলা ‘স্কাইভিউ টাওয়ার’-এ ৯ম ও ১০ম তলায় কলামে ২-৩ ফুট লম্বা ফাটল। ভবনটি ২০১৮ সালে নির্মিত।
  • কালিয়ানপুর: ১৫ তলা ‘গ্রিন ল্যান্ড রেসিডেন্স’-এ লিফট শ্যাফটের পাশে দেওয়ালে চিড় ধরনের ফাটল, দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফুট।
  • বারিধারা ডিওএইচএস: ১২ তলা একটি ভবনে বাহিরের দেওয়ালে হেয়ারলাইন ক্র্যাক। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভবনটি ২০০৯ সালে তৈরি এবং এর আগেও ছোটখাটো কম্পনে ফাটল দেখা গিয়েছিল।
  • তেজগাঁও শিল্প এলাকা: ১০ তলা একটি গার্মেন্টস ভবনে সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ ফাটল। কর্তৃপক্ষ ভবন খালি করেছে।
  • মোহাম্মদপুর ও বসুন্ধরা: আরও ৭-৮টি ভবনে সূক্ষ্ম ক্র্যাকের খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আনোয়ার বলেছেন, “এই ফাটলগুলো দেখে মনে হচ্ছে অনেক ভবনেই রিইনফোর্সমেন্ট (রডের বিন্যাস) এবং কংক্রিটের গুণগত মান ঠিক ছিল না। মাত্র ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পেই যদি এমন ফাটল পড়ে, তাহলে ৭+ মাত্রার কম্পনে এসব ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।”

রাজউকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ফাটলধরা ভবনগুলোর মধ্যে অন্তত ৪টির বিল্ডিং পারমিটে অনিয়ম ছিল এবং নকশা পরিবর্তন করা হয়েছিল।

বাসিন্দাদের আতঙ্ক, করণীয় কী?

অনেক বাসিন্দা আজ দিনভর বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বা আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। ফাটলধরা ভবনগুলোর বাসিন্দাদের ফায়ার সার্ভিস পরামর্শ দিয়েছে:

  • অবিলম্বে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে
  • ভারী আসবাব সরিয়ে নিতে হবে
  • ভবন খালি রাখার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফিরে না যাওয়াই ভালো

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ৫টি ভবনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ স্টিকার লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আজকের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কম্পনই যথেষ্ট ঢাকার লাখ লাখ মানুষের জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শেষ সতর্কতা নয়—এরপর আরও বড় ভূমিকম্প আসার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।