খাসিয়াদের সেং কুটস্নেম
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: পাহাড়ি জনপদে শীতের আভাস যখন প্রকৃতির রঙ আরো গাঢ় করে তোলে, ঠিক তখনই খাসিয়াদের ঘরে ঘরে শুরু হয় বর্ষবিদায় উৎসব সেং কুটস্নেম এর প্রস্তুতি। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব খাসিয়া সমাজের এক বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিচয়। এ বছর বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানটি হয়েছে শনিবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া পুঞ্জি মাঠে। সকাল থেকেই উৎসবকে ঘিরে সেখানে ছিল এক উৎসুক মানুষের ভিড়। নিজেদের ঐতিহ্যকে স্বচক্ষে দেখতে হাজির হয়েছিলেন আশপাশের বহু পাহাড়ি ও সমতলের মানুষ।
সকালের প্রথম আলোয় খাসিয়া নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক জিনসিয়েম পরে বাড়ি থেকে বের হন। রঙিন শাল, নকশাদার স্কার্ফ আর হাতে পরা গয়নার ঝলমলে রেখায় মাঠ যেন উৎসবের রঙে ভরে ওঠে। পুরুষরাও পরে তাদের বিশেষ উৎসব পোশাক। মাগুরছড়া পুঞ্জি মাঠের কেন্দ্রে সবাই একত্রিত হয়ে শুরু করেন প্রার্থনা। বয়োজ্যেষ্ঠদের সুরে সুর মিলিয়ে তাদের কামনা ছিল শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নতুন বছরের কল্যাণ।
দুপুর গড়াতেই শুরু হয় সেং কুটস্নেম এর প্রাণময় অংশ নাচ ও সংগীত। তরুণী থেকে বয়স্কা সব নারী ছন্দ মিলিয়ে নাচেন পাহাড়ি ঢোল আর বাঁশির সুরে। নৃত্যের গতিময় ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে প্রকৃতির প্রতি তাদের টান, সংগ্রামী জীবনের গল্প এবং কমিউনিটির বন্ধন। দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শকদের চোখে তখন মুগ্ধতা আর আনন্দের ছোঁয়া।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন। পুড়ি ভাত, শুকনো মাংস, বাঁশকোরির তরকারি, বনফুল ও পাহাড়ি মশলার নানা পদ সাজানো ছিল খোলা আসরে। অতিথিদের আপ্যায়ন ছিল খাসিয়াদের মূল আয়োজনের একটি বিশেষ অংশ। সবাইকে একসঙ্গে বসে খাওয়ানোর রীতি উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
বিকেলের একটু পরে শুরু হয় বর্ষবিদায়ের প্রধান অনুষ্ঠান। আগুন জ্বালিয়ে সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রতীকী আচার পালন করেন। শিশুদের হাসি, তরুণদের নাচ, প্রবীণদের আশীর্বাদ আর আগুনের উষ্ণতা মিলিয়ে মুহূর্তটি হয়ে ওঠে আবেগময়।
সেং কুটস্নেম এর এই উদ্যাপন খাসিয়া সমাজের শেকড়, পরিচয় এবং ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল। যুগ বদলালেও তাদের এই উৎসব রয়ে গেছে ঠিক আগের মতোই। মাগুরছড়া পুঞ্জি মাঠে আয়োজিত এবারের অনুষ্ঠানটিও তাই প্রমাণ করেছে যে নিজের সংস্কৃতি ধরে রাখার শক্তি মানুষের মধ্যেই নিহিত আছে।










