Home চট্টগ্রাম গ্রেট চিটাগাং আর্থকোয়েক: উপকূল বদলে দেওয়া এক মহাদুর্যোগ

গ্রেট চিটাগাং আর্থকোয়েক: উপকূল বদলে দেওয়া এক মহাদুর্যোগ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল আজ যে রূপে দেখা যায়, তার অনেকটাই গড়ে উঠেছে আড়াইশো বছর আগে ঘটে যাওয়া এক মহাভূমিকম্পের প্রভাবে। ইতিহাসে এটি পরিচিত গ্রেট চিটাগাং আর্থকোয়েক নামে। ১৭৬২ সালের ২ এপ্রিলের সেই ভয়াবহ কম্পনে বদলে যায় উপকূল, বদলে যায় নদীর গতিপথ, বদলে যায় মানুষের জীবনযাত্রা।

উপকূলে আকস্মিক পরিবর্তন

সেই সময়কার ব্রিটিশ, আরাকান এবং স্থানীয় লেখকরা বর্ণনা দিয়েছেন যে পুরো দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কয়েক মিনিট ধরে তীব্র কম্পনে কেঁপে ওঠে। বিজ্ঞানীরা পরবর্তী গবেষণায় দেখেছেন, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল আটের কাছাকাছি। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ভূমির উচ্চতা পরিবর্তনে। কোথাও কয়েক মিটার ভূমি উঁচু হয়ে যায়, কোথাও আবার নিচে নেমে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। চট্টগ্রাম কক্সবাজার উপকূলের বহু চর ও বালুচরের উৎপত্তি সেই সময়ের পর।

ফল্ট লাইন ও টেকটনিক বাস্তবতা

এই অঞ্চলের নিচে ভারতীয় প্লেট ধীরে ধীরে ঢুকে যাচ্ছে বার্মা প্লেটের নিচে। শত শত বছর ধরে জমা হওয়া চাপ একসময় হঠাৎ মুক্তি পেলে জন্ম নেয় বড় ধরনের সাবডাকশন ভূমিকম্প। ১৭৬২ সালের ঘটনাটি ছিল সেই ধরনেরই একটি ভয়ংকর চাপমুক্তি। এ ধরনের ভূমিকম্প শুধু ভূমি কাঁপায় না উপকূলীয় গঠন পুরোপুরি বদলে দেয়।

প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা জানা যায় না

ঘটনার সময়কার নথি খুব সীমিত। তবে সমসাময়িক বিবরণগুলোতে মানুষের প্রাণহানির কথা এসেছে বহুবার। উপকূলের বাজার, গ্রাম এবং বসতি হঠাৎ ডুবে যাওয়া বা ভেঙে পড়ার কারণে অসংখ্য মানুষ মারা যায় বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়নি তথ্য-সংগ্রহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে।

বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সুনামির মতো জলতরঙ্গ

চাপমুক্তির পর সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। আরাকান উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। স্থানীয় কিংবদন্তি এবং ইংরেজ নথিতে উঠে এসেছে ঢেউয়ের উচ্চতা ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ। বিজ্ঞানীরা পরে গবেষণায় নিশ্চিত করেন যে এটি ছিল টেকটনিক পরিবর্তনজনিত আকস্মিক জলতরঙ্গ।

আজ কেন এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ

১৭৬২ সালের গ্রেট চিটাগাং ভূমিকম্প দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনার উদাহরণ। আধুনিক গবেষকরা নিয়মিত উল্লেখ করেন যে একই টেকটনিক সিস্টেমে এখনও চাপ জমছে। এই কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। যারা এই অঞ্চলের ভবনগঠন পরিকল্পনা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করেন তাদের জন্য ১৭৬২ সালের ঘটনা এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

ইতিহাসের শিক্ষা

১৭৬২ সালের ঘটনার পর উপকূলীয় অঞ্চলের মানচিত্র বদলে গিয়েছিল। আজও সেখানকার অনেক ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে এ ঘটনার ছাপ স্পষ্ট। ইতিহাস বলছে বড় সাবডাকশন ভূমিকম্পের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং বিস্তৃত হতে পারে। এই শিক্ষা বর্তমান সময়ের প্রস্তুতি পরিকল্পনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি চাইলে এই প্রতিবেদনটি আরও দীর্ঘ করে ম্যাগাজিন সংস্করণে রূপান্তর করতে পারি অথবা এর জন্য একটি ইমেজ প্রম্পটও তৈরি করে দিতে পারি।