Home জাতীয় নারীর অধিকার সুরক্ষায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন শক্তিশালী করার আহ্বান

নারীর অধিকার সুরক্ষায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন শক্তিশালী করার আহ্বান

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুবিধা এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলেছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নারীদের অদৃশ্য করে তোলে। তাই নারীর পরিচয় ও অধিকার নিশ্চিত করতে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪’ সংশোধন করা জরুরি।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) “নারী অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী নিবন্ধন আইন” শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল—‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, “জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নারীদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। প্রতিটি নারীর সঠিক পরিচয় ও অধিকার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনটির সংশোধন এবং তা শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি।”

আলোচকরা জানান, জন্ম নিবন্ধনের অভাবে বয়স প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা মেয়েদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর বাল্যবিবাহ নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার অন্যতম কারণ। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের প্রারম্ভিক মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মাতৃমৃত্যুর হারও বেশি। পাশাপাশি নিবন্ধনহীনতা নারী পাচার এবং নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি করে।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করলেও আইনের দুর্বলতা এ পথে বড় বাধা। বর্তমানে দেশে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গড় হারের তুলনায় অনেক কম। পরিস্থিতি উন্নয়নে আইন সংশোধন করে পরিবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়, যাতে হাসপাতালে সংঘটিত জন্ম ও মৃত্যু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, “ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর মর্যাদা সুরক্ষায় সকল নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।”

জিএইচএআই-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করা গেলে প্রত্যেক নারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.৯ অর্জনে সহায়তা করবে।”

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)-এর কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর স্টাফ রিপোর্টার রাবেয়া বেবী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।