Home আকাশ পথ ডিসেম্বরের মধ্যে পিআইএ বেসরকারি খাতে যাচ্ছে

ডিসেম্বরের মধ্যে পিআইএ বেসরকারি খাতে যাচ্ছে

স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ

এভিয়েশন ডেস্ক: পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক তহবিলের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে দেশটির জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা ‘পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স’ (পিআইএ)-এর বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাকিস্তান সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটিকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে এবার স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সেনেট কমিটিকে অগ্রগতি অবহিতকরণ
বৃহস্পতিবার সেনেটের স্থায়ী বেসরকারিকরণ কমিটিকে (চেয়ারম্যান সেনেটর আফনানউল্লাহ) পাকিস্তান সরকারের বেসরকারিকরণ কমিশন জানিয়েছে, পিআইএ-এর ‘সাইট ডিউ ডিলিজেন্স’ (Site Due Diligence) বা তথ্যানুসন্ধান প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। কমিশনের কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, সরকারি সময়সীমার মধ্যেই স্বচ্ছ ও নির্ভুলভাবে সমস্ত পদক্ষেপ সম্পন্ন করা হবে। বর্তমানে চারটি সংস্থা ও সমিতি পিআইএ-এর হিসাব, বিমান এবং ফ্লাইট রুট পর্যালোচনা করছে।

আগের ব্যর্থতা ও নতুন কৌশল
এর আগে পিআইএ-কে বেসরকারিকরণের একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। সে সময় ন্যূনতম মূল্য ৩০০৫ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হলেও, একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থা মাত্র ৩৬ মিলিয়ন ডলারের বিড করেছিল। বিপুল ঋণ, কর্মী অসন্তোষ এবং সীমিত নিয়ন্ত্রণের কারণে তখন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাননি।

তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। সরকার এবার পূর্ণ অংশ বিক্রয়ের অফার দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে লিজকৃত বিমানগুলোর ওপর সেলস ট্যাক্স বাতিল করা হয়েছে এবং আইনি ও কর সংক্রান্ত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে, পিআইএ-এর প্রায় ৮০% ঋণ রাষ্ট্রের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের দায়ভার কমিয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের দৌড় ও আয়ের লক্ষ্যমাত্রা
নতুন এই নীতিমালার ফলে এয়ারব্লু (Airblue), লাকি সিমেন্ট (Lucky Cement), আরিফ হাবিব গ্রুপ এবং ফৌজি ফার্টিলাইজারের মতো পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিডিংয়ে অংশ নিচ্ছে। চূড়ান্ত বিড এই বছরের শেষের দিকে আশা করা হচ্ছে।

বেসরকারিকরণ মন্ত্রী মুহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, এ বছর বেসরকারিকরণ থেকে সরকার ৮৬ বিলিয়ন রুপি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেন, “পূর্বের বিডিংয়ে আয়ের মাত্র ১৫% সরকারের কাছে যেত, বাকিটা কোম্পানির ভেতরে থাকত। কিন্তু এবার পুরো প্রক্রিয়ায় সরকার পুরো আয় আশা করছে।”

পুনরায় চালু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট
বেসরকারিকরণের এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই পিআইএ-এর জন্য সুসংবাদ এসেছে। ভুয়া পাইলট লাইসেন্স কেলেঙ্কারির কারণে প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে। এছাড়া চার বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইউরোপীয় রুটেও ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে, যা বিমান সংস্থাটির ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে পাকিস্তানের বিমান খাতে নতুন গতি ও প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে, যা দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।