খামারিদের চ্যালেঞ্জ খাদ্য সংকট থেকে রোগ নিয়ন্ত্রণ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশের প্রাণিসম্পদ খাত দ্রুত এগিয়ে গেলেও চাষি ও খামারিদের সামনে এখনো রয়েছে নানা বাস্তব সংকট। খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি, রোগবালাই, ওষুধের মানসংকট এবং বাজারে অস্থিতিশীলতা—সব মিলিয়ে খামার পরিচালনা অনেকের জন্যেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি খামারগুলো খরচের চাপ সামাল দিতে বেশি সমস্যায় পড়ে।
পশুখাদ্যের দাম গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ভুষি, খৈল, কনসেনট্রেট ও তৈলবীজজাত খাবারের দাম বাড়ায় খামারি প্রতি মাসেই বেশি উৎপাদন ব্যয় বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে পশুর সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছেন অথবা কম খরচে টিকে থাকার নতুন উপায় খুঁজছেন। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাদ্য শিল্পে আমদানি নির্ভরতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টা–সয়াবিনের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেশে তীব্রভাবে পড়েছে।
খামারিদের আরেক বড় চ্যালেঞ্জ মৌসুমি রোগবালাই। গরুর ক্ষুরা রোগ, পক্স, ছাগলের পিপিআর এবং হাঁস-মুরগির বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ অনেক খামারিকে প্রতিবছর ক্ষতির মুখে ফেলে। যদিও সরকারি পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়, তবু প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত টিকা ও ভেটেরিনারি সেবা সময়মতো পাওয়া সবসময় সম্ভব হয় না। এর ফলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং উৎপাদন ব্যাহত হয়।
বাজারব্যবস্থাপনাও একটি বড় সমস্যা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও অনেক সময় খামারিরা ন্যায্যমূল্য পান না। দুধের ক্ষেত্রে সংগ্রহ কেন্দ্রের অভাব, মাংস ও পোলট্রির ক্ষেত্রে দামের হঠাৎ ওঠানামা খামারিদের অনিশ্চয়তায় ফেলে। বড় কোম্পানি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ অনেক জায়গায় ছোট খামারিদের প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দেয়।
এ ছাড়া নিম্নমানের ওষুধ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য উপাদান, প্রশিক্ষণের ঘাটতি এবং বাজারে তথ্যের অভাবও কৃষকদের দুর্বল করে রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষতা উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদনে স্থানীয় শিল্প শক্তিশালী করা, ফিল্ড পর্যায়ে টিকাদান জোরদার করা এবং খামারিদের জন্য স্বচ্ছ বাজার তৈরি করলে এ সংকট অনেকটাই কমে আসবে।
অনেক খামারি বলছেন, সরকারি সহায়তা কিছুটা বাড়ালে এবং আধুনিক রোগনির্ণয় সুবিধা সহজলভ্য হলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণ ও ইনস্যুরেন্স সেবা সহজ হলে খামারিকাজ আরও স্থিতিশীলতা পাবে।
প্রাণিসম্পদ খাতের ভিত্তি হিসেবে খামারিদের দৈনন্দিন সংগ্রাম দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথেও বড় ভূমিকা রাখছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা গেলে খাতটির সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।










