মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক: ছেলের সাবেক বাগদত্তা তথা নিজের বর্তমান প্রেমিকাকে সুইমিং পুলের পানিতে ডুবিয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। তবে মার্কিন আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি বা ‘প্লী ডিল’-এর মাধ্যমে লঘু দণ্ডে দণ্ডিত হয়ে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।
মুক্ত পাওয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম মার্ক গিবন (৬২)। তিনি যুক্তরাজ্যের বাকিংহামশায়ারের বিকনসফিল্ডের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন লাইটিং টেকনিশিয়ান এবং নিজের প্রতিষ্ঠান চালান।
ঘটনার বিবরণ
গত আগস্ট মাসে ফ্লোরিডার ডিজনিল্যান্ডের কাছে সলতেরা রিসোর্টে ছুটিতে গিয়েছিলেন মার্ক গিবন ও তার প্রেমিকা জেসমিন ওয়াইল্ড (৩৩)। জেসমিন মূলত মার্কের ছেলে অ্যালেক্সের সাবেক বাগদত্তা এবং মার্কের দুই নাতি-নাতনির মা।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, রিসোর্টে থাকাকালীন মার্কের উইলে বা সম্পত্তির দলিলে জেসমিনের নাম থাকা বা না থাকা নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে মার্ক জেসমিনের মাথা পানির নিচে চেপে ধরেন এবং তাকে ডুবিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। এ সময় জেসমিনের ৯ বছর বয়সী মেয়ে তার মাকে বাঁচাতে পুলে ঝাঁপ দেয়। পর্যটকরা পুলিশে খবর দিলে ৩ আগস্ট মার্ককে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযোগ ও আদালতের রায়
শুরুতে মার্কের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগ আনা হলেও পরে তা লঘু করে ‘মারধর’ বা ব্যাটারির অভিযোগে নামিয়ে আনা হয়। চলতি মাসের শুরুতে মার্ক দোষ স্বীকার করে একটি ‘প্লী ডিল’ বা সমঝোতা চুক্তিতে যান। এর ফলে গুরুতর অপরাধের পরিবর্তে সাধারণ মারধরের অভিযোগে তাকে দণ্ডিত করা হয়।
আদালতের নির্দেশে মার্ক ১,৩০০ ডলার (প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা) জরিমানা পরিশোধ করেন এবং তার পাসপোর্ট ফেরত পান। এর ফলে তিনি এখন মুক্ত।
প্রেমিকার অনুরোধে মুক্তি
মামলাটির মোড় ঘুরে যায় যখন ভুক্তভোগী জেসমিন নিজেই প্রসিকিউটরদের কাছে মার্ককে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি দাবি করেন, মার্ক একজন ‘ভালো মানুষ’ এবং তার পরিবারকে ভালোবাসেন। জেসমিন বলেন, “তার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। সে আমার সেরা বন্ধু।”
প্রসিকিউটররা জানান, ভুক্তভোগী মনে করেন মার্ক যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছেন এবং তিনি চান মার্ক যুক্তরাজ্যে ফিরে তার ও তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। তার কোনো ভয় নেই বলে আদালতকে জানান জেসমিন।
পারিবারিক জটিলতা ও ছেলের ক্ষোভ
জেসমিন ওয়াইল্ড পেশায় একজন হেয়ারড্রেসার। মার্কের ছেলে অ্যালেক্সের (৩৪) সঙ্গে ২০২১ সালে তার বিচ্ছেদ হয়। তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে। বিচ্ছেদের পরেই বাবার সঙ্গে সাবেক প্রেমিকার সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে।
এই সম্পর্ক নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এই সম্পর্কের কথা জানার পর ক্ষিপ্ত হয়ে অ্যালেক্স তার বাবার ওপর ৮০,০০০ পাউন্ড দামের পোরশে গাড়ি তুলে দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অ্যালেক্সকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পারিবারিক এক সূত্র জানিয়েছে, ছেলের সাবেক প্রেমিকা ও নিজের নাতি-নাতনির মায়ের সঙ্গে বাবার এই সম্পর্ক অ্যালেক্স ‘ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখেন। বর্তমানে বাবা ও ছেলের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই।










