Home অন্যান্য ব্যাংককের রাজপথে শোকের ছায়া:‘রানি মা’র স্মরণে গোলাপি হাতির অভূতপূর্ব শোভাযাত্রা

ব্যাংককের রাজপথে শোকের ছায়া:‘রানি মা’র স্মরণে গোলাপি হাতির অভূতপূর্ব শোভাযাত্রা

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্যাংককের আকাশ সেদিন ছিল বিষাদের ধূসর রঙে রাঙা, কিন্তু রাজপথ হয়ে উঠেছিল এক ভিন্ন আবহে রঙিন। তবে এ রঙ উৎসবের নয়, এ রঙ পবিত্রতা ও শ্রদ্ধার।বৃহস্পতিবার ২৭ নভেম্বর থাইল্যান্ডের গ্র্যান্ড প্যালেসের সামনে দেখা মিলল এক অভূতপূর্ব ও হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের। পেস্টেল-গোলাপি রঙে রাঙানো ১১টি বিশাল হাতি ধীর লয়ে এগিয়ে চলে রাজপ্রাসাদের দিকে, উদ্দেশ্য- সদ্য প্রয়াত থাইল্যান্ডের ‘রানি মা’ (Queen Mother) সিরিকিত-এর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন।

সংগৃহীত ছবি

গোলাপি আবহে রাজকীয় বিদায়
হাতিগুলোর শরীর রাঙানো হয়েছিল পেস্টেল-গোলাপি রঙে, যা থাই ঐতিহ্যে পবিত্র শ্বেতহস্তীর প্রতীকী রূপ। তাদের শুভ্র দন্তরাজি সজ্জিত ছিল সোনালি অলংকারে, গায়ে ছিল ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় সাজপোশাক। সবচেয়ে বড় হাতিটির পিঠে সযত্নে বসানো ছিল রানি সিরিকিতের একটি সুসজ্জিত প্রতিকৃতি।

শোভাযাত্রাটি যখন গ্র্যান্ড প্যালেসের প্রধান ফটকের সামনে পৌঁছায়, তখন এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। প্রশিক্ষিত হাতিগুলো একসঙ্গে নতজানু হয়ে মাথা নামিয়ে রানির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। দেখে মনে হচ্ছিল, শোকের ভাষা কেবল মানুষের নয়, এই বিশাল প্রাণীদের হৃদয়েও পৌঁছে গেছে।

নেপথ্যের কারণ ও ঐতিহ্য
গত ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মা, রানি সিরিকিত। তাঁর বিদায়ে থাইল্যান্ড সরকার এক বছরের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।

কিন্তু কালো বা সাদার বদলে হাতিগুলোকে কেন রাঙানো হলো গোলাপি রঙে? থাই সংস্কৃতি ও ইতিহাসে ‘সাদা হাতি’ বা অ্যালবিনো হাতি অত্যন্ত পবিত্র, দুর্লভ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে এই হাতিগুলো রাজপরিবারের মর্যাদার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আয়োজকরা কৃত্রিম পেস্টেল-গোলাপি রঙের মাধ্যমে সেই পবিত্র শ্বেতহস্তীর আবহ তৈরি করেছেন, যা রানির প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

শোক ও শ্রদ্ধার মেলবন্ধন
এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের উদ্যোক্তা ‘রয়্যাল এলিফ্যান্ট ক্রাল ভিলেজ’-এর মালিক লাইথংরিয়ান মিপান। প্রায় তিন দশক ধরে হাতি সংরক্ষণ ও প্রজননের সঙ্গে যুক্ত এই ব্যক্তি জানান, রানি সিরিকিত সবসময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং হাতি পালনে উৎসাহ দিতেন। রানির সেই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবেই হাতিদের নিয়ে এই শেষ শ্রদ্ধা।

মিপান বলেন, “রানি মা হাতিদের ভালোবাসতেন। আজ হাতিরাও তাদের মাকে বিদায় জানাতে এসেছে।”

বিষাদমাখা সংস্কৃতি
রানি সিরিকিতের প্রয়াণে থাইল্যান্ডের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সরকারি নির্দেশে উৎসবের জাঁকজমক কমিয়ে আনা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘লয় ক্রাথং’ উৎসব এবং আসন্ন ‘ভিজিট চাও ফ্রায়া ২০২৫’ লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আতশবাজির ঝলকানি। তার বদলে স্থান করে নিয়েছে ড্রোন বাতির স্নিগ্ধ ও স্মরণী আলো। সাধারণ মানুষও কালো ও সাদা পোশাক পরিধান করে শোক পালন করছেন।

ব্যাংককের রাজপথে গোলাপি হাতিদের এই মৌন মিছিল কেবল একটি সংবাদ নয়; এটি থাই রাজতন্ত্র, ইতিহাস এবং জনগণের আবেগের এক মহাকাব্যিক চিত্র। যেখানে শোকের রঙ কালো ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে শ্রদ্ধার গোলাপি, আর বিদায়ের সুর মিশে গেছে ঐতিহ্যের গাম্ভীর্যে।