Home আন্তর্জাতিক ইমরান খান: আইনি প্যাঁচ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অনিশ্চিত গন্তব্য

ইমরান খান: আইনি প্যাঁচ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অনিশ্চিত গন্তব্য

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভবিষ্যৎ কী? আদিয়ালা জেলের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী পিটিআই প্রধান এক গভীর আইনি ও রাজনৈতিক চক্রব্যূহে আটকা পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর মুক্তির পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তার মুখে।

আইনি বেড়াজাল: মুক্তির পথে প্রধান বাধা
ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোশাখানা, সাইফার মামলা এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীন শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক আইনি লড়াই নয়, বরং এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগের কৌশল। যখনই তিনি কোনো বড় মামলায় আদালত থেকে জামিন বা খালাস পান, তাৎক্ষণিকভাবে নতুন বা পুরনো অন্য কোনো মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আইনি প্রক্রিয়ার এই জটিল আবর্তের মূল উদ্দেশ্য হলো তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে আটকে রাখা এবং নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রাখা।

এস্টাবলিশমেন্টের সাথে সম্পর্ক ও মুক্তির সমীকরণ
পাকিস্তানের রাজনীতির মূল চাবিকাঠি যাদের হাতে, সেই শক্তিশালী ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ বা সেনাবাহিনীর সাথে ইমরান খানের সম্পর্কের চরম অবনতি তাঁর ভবিষ্যতের ওপর সবচেয়ে বড় ছায়া ফেলেছে। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে সমঝোতা বা ‘ডিল’ ছাড়া কোনো বড় নেতার জেল থেকে মুক্তি পাওয়া বা ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব।

বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এস্টাবলিশমেন্টের সাথে সম্পর্কের বরফ না গলা পর্যন্ত ইমরান খানের মুক্তির সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর সমালোচনা এবং ৯ মে-র সহিংসতার ঘটনার পর দুই পক্ষের আস্থার সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সহসা কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকারের কঠোর অবস্থান ও ‘মাইনাস ইমরান’ ফর্মুলা
বর্তমান জোট সরকার ইমরান খানকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক স্পেস বা সুযোগ দিতে নারাজ। সরকার এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ দৃশ্যত ‘মাইনাস ইমরান’ ফর্মুলা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এর অর্থ হলো, ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে পিটিআই-কে নেতৃত্বশূন্য করা অথবা দলের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে তুলে দেওয়া। সরকার মনে করে, ইমরান খান বাইরে থাকলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তাই তাঁকে জেলের ভেতরে রাখাই সরকারের জন্য সুবিধাজনক কৌশল।

সব মিলিয়ে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রযন্ত্রের কঠোর অবস্থান এবং আইনি জটিলতা তাঁকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আগামী দিনগুলোতে কোনো নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন বা এস্টাবলিশমেন্টের সাথে পর্দার আড়ালের কোনো সমঝোতা না হলে, আদিয়ালা জেলেই দীর্ঘ সময় কাটাতে হতে পারে পাকিস্তানের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।