বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পের মান উন্নয়ন এবং চায়ের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড ও জেলা প্রশাসন। নিলাম ছাড়া অবৈধভাবে চা বিক্রি বন্ধ করা এবং মানহীন কাঁচা পাতা সরবরাহ ও ক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে চলতি মৌসুমের জন্য চা কারখানাগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর ২০২৫) পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পের অংশীজনদের সঙ্গে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ (এসপিপি, এলডিসি, এএফডব্লিউপি)।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. কাজী সায়েমুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের যুগ্ম সচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজিবি ও এনএসআই প্রধান, চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা আরিফ খান ও আমির হোসেন। সভায় চা বাগান মালিক, চা কারখানা মালিক, বাগান মালিক সমিতির প্রতিনিধি এবং চা ব্যবসায়ীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সভায় উত্তরাঞ্চলের চায়ের গুণগত মান ও দাম বাড়াতে বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. অবৈধ বিক্রি বন্ধ: নিলাম বহির্ভূত বা অবৈধ উপায়ে চা বিক্রি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
২. মান নিয়ন্ত্রণ: ‘কেউ মানহীন পাতা সরবরাহ করবে না, কেউ মানহীন পাতা কিনবে না’—এই নীতিতে অটল থাকার অঙ্গীকার করা হয়।
৩. যান্ত্রিকীকরণ ও প্রশিক্ষণ: চা বাগানে আধুনিক মেশিনের ব্যবহার বাড়ানো এবং চাষি ও শ্রমিকদের সঠিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
৪. সঠিক তথ্য প্রদান: কারখানাগুলোকে উৎপাদনের সঠিক তথ্য ও ইনফরমেশন সংরক্ষণ ও সরবরাহ করতে হবে।
চায়ের মান ধরে রাখার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ এবং জেলা প্রশাসক মো. কাজী সায়েমুজ্জামান। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যারা চায়ের মান নষ্ট করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও চা বোর্ড কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং বা তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে মৌসুমের জন্য সব চা কারখানা বন্ধ রাখা হবে। এছাড়া চা গাছের সঠিক পরিচর্যা ও আগামী মৌসুমের প্রস্তুতির জন্য চা বাগান ছাঁটাইকরণ (Pruning) নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন পর চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের এমন কঠোর ও ইতিবাচক পদক্ষেপে উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পে নতুন গতির সঞ্চার হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা।










