Home আকাশ পথ ২৯ ঘণ্টায় ১২,৪০০ মাইল: বিশ্বের দীর্ঘতম কমার্শিয়াল ফ্লাইটের রেকর্ড

২৯ ঘণ্টায় ১২,৪০০ মাইল: বিশ্বের দীর্ঘতম কমার্শিয়াল ফ্লাইটের রেকর্ড

ছবি: সংগৃহীত

এভিয়েশন ডেস্ক: এভিয়েশন বা বিমান চলাচলের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। দীর্ঘ ২৯ ঘণ্টা আকাশে উড়ে এবং প্রায় ১২,৪০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইটের রেকর্ড গড়ল চীনের একটি যাত্রীবাহী বিমান। সম্প্রতি সাংহাই থেকে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস পর্যন্ত এই ম্যারাথন যাত্রা সম্পন্ন করে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স

ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে এই রুটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে ঠিক অপর প্রান্তে (Antipodal) পৌঁছানোর এই যাত্রায় বিমানটি প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার (১২,৪০০ মাইল) আকাশপথ অতিক্রম করেছে, যা সিভিল এভিয়েশনের ইতিহাসে বিরল।

চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের এই ফ্লাইটটি চীনের সাংহাই পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। গন্তব্য ছিল আর্জেন্টিনার মিনিস্ট্রো পিস্তারিনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এত বিশাল দূরত্ব একটানা অতিক্রম করা বর্তমান প্রযুক্তির যাত্রীবাহী বিমানের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তাই জ্বালানি সংগ্রহ এবং টেকনিক্যাল কারণে ফ্লাইটটি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে একটি সংক্ষিপ্ত বিরতি দেয়। তবে একই ফ্লাইট নম্বরে এবং একই বিমানে সম্পূর্ণ পথটি পাড়ি দেওয়ায় একে ‘সিঙ্গেল জার্নি’ হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে।

ফ্লাইটটি পরিচালনায় ব্যবহার করা হয়েছে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর (Boeing 777-300ER) মডেলের অত্যাধুনিক বিমান।

চীন এবং আর্জেন্টিনা—উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে এই রুটের গুরুত্ব অপরিসীম। এতদিন এই দুই গন্তব্যের মধ্যে যাতায়াত করতে হলে যাত্রীদের ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকায় দীর্ঘ ট্রানজিট নিতে হতো, যাতে সময় লাগত ৩০ থেকে ৩৫ ঘণ্টারও বেশি। নতুন এই রুটের ফলে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইটের খেতাবটি ছিল মূলত সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের দখলে। তাদের সিঙ্গাপুর থেকে নিউইয়র্কগামী (JFK) বিরতিহীন ফ্লাইটটি প্রায় ১৯ ঘণ্টায় ৯,৫০০ মাইল পথ পাড়ি দেয়। তবে দূরত্বের বিচারে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের নতুন এই রুটটি সেই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ‘নন-স্টপ’ বা বিরতিহীন, আর চায়না ইস্টার্ন একটি টেকনিক্যাল স্টপ নিয়েছে।

এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে দুইবার এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। যাত্রীদের চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, অতি-দূরপাল্লার এই ফ্লাইটগুলো প্রমাণ করে যে বিমান প্রযুক্তি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট কতটা উন্নত হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে ‘প্রজেক্ট সানরাইজ’ বা এই ধরণের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী ফ্লাইট পরিকল্পনার জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত।