Home সারাদেশ রামগড় হানাদার মুক্ত দিবস: একাত্তরের বীরত্ব ও ত্যাগের স্মরণে

রামগড় হানাদার মুক্ত দিবস: একাত্তরের বীরত্ব ও ত্যাগের স্মরণে

মো. মাসুদ রানা, রামগড়: ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল ফেনী নদীর তীরে অবস্থিত রামগড় মহকুমা শহর। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে রামগড় পালন করেছিল এক অসামান্য ভূমিকা। 

রামগড়ের কৌশলগত গুরুত্ব ও প্রতিরোধ:
রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গড়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ শিবির, যা প্রতিরোধ সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করেছিল। ২ মে, ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী রামগড়ে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা মেজর রফিকুল ইসলাম তীব্র প্রতিরোধের পর সমস্ত স্থাপনা ও যুদ্ধসামগ্রী সীমান্তসংলগ্ন ভারতের সাবরুমে স্থানান্তরের নির্দেশ দিলে রামগড়ের পতন ঘটে।

পুনরুত্থান ও চূড়ান্ত বিজয়:
তবে, এই পতন ছিল সাময়িক। ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় আক্রমণ শুরু করেন। ৭ ডিসেম্বর রাত ও ৮ ডিসেম্বর ভোরের আলো ফোটার আগেই ভারতীয় দুটি জঙ্গিবিমান রামগড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় দু’দফা সফল হামলা চালায়। এই হামলায় শত্রুরা রামগড় ত্যাগে বাধ্য হয় এবং অবশেষে রামগড় আনুষ্ঠানিকভাবে হানাদারমুক্ত হয়।

হানাদার মুক্ত দিবসের উদযাপন:
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রামগড় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়। র‍্যালিটি রামগড় বাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিজয় ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়, যেখানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ:
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তারা একাত্তরের বীরত্ব ও ত্যাগের কথা স্মরণ করেন। উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা রেহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এডহক কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমোদ বিহারী নাথ, এবং সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এই দিনে, রামগড়ের মুক্তিকামী মানুষের আত্মত্যাগ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহস ও বীরত্বকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।