Home ধর্ম ও জীবন পবিত্র জুমা: মুমিনের সাপ্তাহিক ঈদ ও আত্মশুদ্ধির মহেন্দ্রক্ষণ

পবিত্র জুমা: মুমিনের সাপ্তাহিক ঈদ ও আত্মশুদ্ধির মহেন্দ্রক্ষণ

‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু ইজা নুদিয়া লিস-সালাতি মিন ইয়াওমিল জুমুআতি…’
“হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ত্যাগ করো।” (সূরা জুমুআ, আয়াত: ৯)

আজ পবিত্র শুক্রবার। দিনটি ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ বা সমস্ত দিনের সর্দার। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর কর্মব্যস্ততা, ক্লান্তি আর গুনাহের আবর্জনা ধুয়ে-মুছে নিজেকে নতুন করে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করার দিন আজ।

কেন এই দিনটি শ্রেষ্ঠ?
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সূর্য উদিত হওয়া দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিনই শ্রেষ্ঠ। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আর এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।” (মুসলিম)

মুমিনের জন্য জুমার দিনটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। এই দিনের বিশেষ কিছু মুহূর্ত আছে, যখন বান্দা যা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাই কবুল করেন।

আজকের দিনে আমাদের করণীয়
জুমার দিনের ফযিলত হাসিল করতে কিছু সুন্নাহ ও আমল পালন করা জরুরি:
১. উত্তমরূপে গোসল করা ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা।
২. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৩. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া: হাদিসে আছে, যারা জুমার নামাজে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, তারা উট কুরবানির সওয়াব পায়।
৪. সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর চমকাতে থাকবে।”
৫. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা: আজকের দিনে নবীজি (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের বিশেষ ফযিলত রয়েছে।
৬. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা: খুতবা চলাকালীন কথা বলা বা অন্যমনস্ক থাকা জুমার সওয়াব নষ্ট করে দেয়।

শোক ও প্রার্থনার বিশেষ আবেদন
আজকের এই পবিত্র দিনে আমাদের হৃদয়ের একটি অংশজুড়ে থাকুক রাজশাহীর তানোরের সেই ছোট্ট শিশু সাজিদ। ৩২ ঘণ্টার লড়াই শেষে যে শিশুটি আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে, আজ জুমার নামাজ শেষে দোয়ার হাত তোলার সময় তাকে যেন আমরা ভুলে না যাই।

আসুন, আজকের বিশেষ মোনাজাতে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ফরিয়াদ করি—

হে আল্লাহ, নিষ্পাপ শিশু সাজিদকে জান্নাতের পাখি হিসেবে কবুল করুন।

তার শোকসন্তপ্ত পিতা-মাতাকে এই বিশাল শোক সইবার ‘সবরে জামিল’ দান করুন।

আমাদের দেশকে সব ধরনের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ও অরাজকতা থেকে হেফাজত করুন।

আমাদের ঈমান ও আমলকে মজবুত করে দিন।

মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনিতে আজ প্রতিটি মুমিনের হৃদয় প্রশান্ত হোক। জুমার দিনের বরকত প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক।

জুম্মা মোবারক।