Home কৃষি পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের ‘আমদানি খেলায়’ বলির পাঁঠা কৃষক

পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের ‘আমদানি খেলায়’ বলির পাঁঠা কৃষক

 ভোক্তাও জিম্মি আকাশছোঁয়া দামে

শহিদুল হক, ঢাকা: দেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে এবার লাভের মুখ দেখার স্বপ্ন বুনছিলেন প্রান্তিক চাষিরা। ঠিক সেই মুহূর্তে বাজারে তৈরি করা হলো কৃত্রিম অস্থিরতা। অভিযোগ উঠেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে সরকারের কাছ থেকে আমদানির অনুমতি (আইপি) আদায় করে নিয়েছে। ফলে সিন্ডিকেটের পকেট ভারী হলেও চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন দেশের কৃষকরা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এবারের পরিস্থিতিটি কেবল ‘দাম বৃদ্ধি’র ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ফাঁদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি (৪৪ লাখ টন) পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে এবং এখনো প্রায় এক লাখ টন পুরোনো পেঁয়াজ মজুত আছে। অর্থাৎ, ঘাটতির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। তবুও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে গত সোম ও মঙ্গলবার বিপুল পরিমাণ (দিনে ৫৭৫টি করে) আমদানি অনুমতি ইস্যু করানো হয়েছে।

লাভের গুড় কার পকেটে?
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র। ভারত থেকে সব খরচ মিলিয়ে যে পেঁয়াজ দেশে ঢুকছে ৫০ টাকা দরে, সেই পেঁয়াজই খুচরা বাজারে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। আমদানিকারক ও পাইকারি পর্যায়ের শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট একদিকে ভোক্তাদের পকেট কাটছে, অন্যদিকে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও ঢাকার পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়ে এই বিশাল মুনাফার প্রমাণ পেয়েছে। তবে শুধুই ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার’ আশ্বাসে কি এই চক্র থামবে? এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের।

কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ
কারওয়ান বাজারের আড়তদার ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসার কথা। কিন্তু ঠিক এই সময়েই বাজারে বিদেশি পেঁয়াজের ঢল নামলে দেশি পেঁয়াজের কদর কমবে। ফলে মৌসুমের শুরুতে চড়া দামের আশায় থাকা কৃষকরা আবারও লোকসানের মুখে পড়বেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনিটরিং উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, “আমদানির অনুমতি আদায়ের জন্যই একটি চক্র ইচ্ছা করে সংকট তৈরি করেছে। অথচ দেশে মজুত পর্যাপ্ত। সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ালে আমাদের আমদানির প্রয়োজনই হতো না।”

ভোক্তা স্বার্থ ও ‘অদৃশ্য শক্তি’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন মনে করেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও অদৃশ্য শক্তির চাপে সরকার আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে। এতে কৃষকের স্বার্থ পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। তার মতে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমদানিকারকদের কেনা দাম ও বিক্রয় দামের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এখনই এই ‘আমদানি খেলা’ নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে বছর শেষে পরিসংখ্যানের খাতায় উৎপাদনের রেকর্ড থাকলেও, মাঠের কৃষকের ঝুলিতে থাকবে কেবলই হতাশা।

এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com