Home Third Lead নেপথ্যে কেরানীগঞ্জের ‘শাহীন সিন্ডিকেট’ আর ওপারের ছক

নেপথ্যে কেরানীগঞ্জের ‘শাহীন সিন্ডিকেট’ আর ওপারের ছক

শাহীন আহমেদ। ছবি- সংগৃহীত

 

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির লড়াকু কণ্ঠস্বর এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে এক গভীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সুপরিকল্পিত নেটওয়ার্ক। গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল অর্থ ও মারণাস্ত্রের যোগানদাতা ছিলেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’। তাকে সহযোগিতা করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডাররা এবং সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক প্রভাবশালী চক্র।

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী রাজনীতির জন্য হাদি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তার ধারাবাহিক বক্তব্য এবং সংগঠিত রাজনৈতিক অবস্থান দলটিকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ করে। দলীয় অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে তাকে ‘বড় ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপরই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আত্মগোপনে থাকা শাহীন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেওয়ার নীল-নকশা তৈরি হয়।

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শাহীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরেই কেরানীগঞ্জে ক্ষমতার একক আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নথিতে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে নাম থাকলেও গত সরকারের আমলে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গোয়েন্দাদের দাবি:

স্লিপার সেল সমন্বয়: ভারতে বসেই বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপ (যেমন- হোয়াটসঅ্যাপ) ব্যবহার করে দেশে থাকা ‘স্লিপার সেল’-এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি।

অর্থ ও অস্ত্র: প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, হামলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও আধুনিক অস্ত্রের জোগান দিয়েছেন শাহীন নিজেই।

তদন্তে উঠে আসা আরেকটি চাঞ্চল্যকর নাম হলো গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ। গোয়েন্দাদের দাবি, হাদির ওপর হামলার পরপরই খুনিদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করেন তিনি। হামলার আগে ও পরে খুনিদের সাথে হামিদের একাধিকবার ডিজিটাল যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। বর্তমানে তাকে গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কেরানীগঞ্জের স্থানীয় দুজন ছাত্রলীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য মিলছে, তাতে হত্যাকাণ্ডের শিকড় সীমান্তের ওপারে থাকা পলাতক নেতাদের দিকেই নির্দেশ করছে।

 ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিটি সূত্র যাচাই করছি। বিশেষ করে ডিজিটাল ফরেনসিক রিপোর্ট এবং হোয়াটসঅ্যাপ যোগাযোগের তথ্যগুলো শাহীন চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা জোরালোভাবে প্রমাণ করছে। খুব শীঘ্রই এই মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহীন আহমেদ বা আব্দুল হামিদ কেবলই ঘুঁটি হতে পারেন। এর পেছনে উচ্চপর্যায়ের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বা বড় কোনো নেতার সরাসরি ইন্ধন রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন সেফহাউসে থাকা আওয়ামী নেতাদের নিয়মিত ভার্চুয়াল মিটিংগুলো এখন গোয়েন্দা আতশি কাঁচের নিচে।