Home নির্বাচন নতুন দিনের অপেক্ষায় আনোয়ারা-কর্ণফুলী

নতুন দিনের অপেক্ষায় আনোয়ারা-কর্ণফুলী

সরেজমিন প্রতিবেদন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, আনোয়ারা:  ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেশে ফেরার ঘটনাটি চট্টগ্রামের এই জনপদে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আনোয়ারার কালাবিবির দিঘী মোড় থেকে শুরু করে কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত প্রতিটি চায়ের দোকানে এখন প্রধান আলোচনার বিষয় তার এই ‘রাজকীয় প্রত্যাবর্তন’।
সাধারণ কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরলেও সাধারণ ভোটাররা একে দেখছেন রাজনীতির ভারসাম্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন এসেছে, তার হাওয়া লেগেছে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর উপকূলীয় জনপদেও। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে গ্রামের মোড়ে মোড়ে এখন ভোটের আমেজ।

কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় কথা হয় ষাটোর্ধ্ব সবজি বিক্রেতা আবদুল গফুর-এর সাথে। তিনি বলেন:”বাবা, গত দুইবার তো ভোটকেন্দ্রে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। এবার শুনছি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ভোট হবে। তারেক রহমানও দেশে ফিরেছেন। আমরা চাই এমন এক পরিবেশ, যেখানে বুক ফুলিয়ে নিজের পছন্দের মানুষকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব।”

আনোয়ারা উপজেলার কালাবিবির দিঘী মোড়ে একটি চায়ের দোকানে তর্কে মেতেছিলেন একদল যুবক। তাদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন বলেন:”তারেক রহমানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন বিএনপির তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে যে টনিকের মতো কাজ করেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমাদের মতো নতুন ভোটাররা শুধু দলের নাম দেখে নয়, প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ দেখে ভোট দেবেন। আমরা চাই প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান।’’

আনোয়ারার চাতরী ইউনিয়নের গৃহিণী রাবেয়া খাতুন (৪৫) মাঠের রাজনীতি নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন: “এবার মাঠে জামায়াতের ভাইদেরও খুব দেখা যাচ্ছে। তারা বাড়ি বাড়ি এসে পর্দার সাথে চলতে বলছে এবং সৎ লোকের শাসনের কথা বলছে। বিএনপি-জামায়াত এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয়। তবে যে-ই আসুক, আমাদের নিত্যপণ্যের দামটা যেন হাতের নাগালে রাখে।”

আেনোয়ারার গহিরা এলাকার মৎস্যজীবী নির্মল জলদাস একটু সতর্ক কণ্ঠে বলেন: “তপশিল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গ্রামের ভেতর এখনো কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী লোক ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। সরকার যদি আর্মি বা পুলিশ দিয়ে সেন্টারগুলোতে কড়া নিরাপত্তা না দেয়, তবে সাধারণ মানুষ আগের মতো ভোট দিতে যেতে ভয় পাবে।”

দীর্ঘদিন এই আসনটি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের দখলে ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধ থাকায় তাদের সমর্থক বা ভোটারদের বড় একটি অংশ এখন ‘নিরপেক্ষ’ বা ‘সুবিধাবাদী’ অবস্থানে আছে। আওয়ামী লীগের এই ‘বিচ্ছিন্ন’ ভোটগুলো কোন দিকে যাবে, তা জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

এবারে তরুণ বা জেনারেশন জেড (Gen-Z) ভোটাররাও একটি বড় শক্তি। সংবিধান সংস্কারের ওপর যে গণভোট হবে, তা নিয়ে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। তারা শুধু ক্ষমতায় কে যাবে তা নয়, বরং ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ বা সিস্টেম পরিবর্তনের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাধারণ মানুষের মধ্যে অতীতের নির্বাচন নিয়ে এক ধরণের ট্রমা বা ভয় কাজ করছে। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিবেশ এবং তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন তাদের মনে নতুন আশা জাগিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের জোর তৎপরতার বিপরীতে ভোটাররা এখন শুধু সুষ্ঠু পরিবেশের অপেক্ষায়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি

ফ্যাক্টর প্রভাব
তারেক রহমানের ইমেজ বিএনপির জন্য জোয়ার সৃষ্টি করছে।
নতুন ভোটার (Gen-Z) চিরাচরিত রাজনীতির বাইরে ভিন্ন কিছু খুঁজতে পারে।
স্থানীয় উন্নয়ন বনাম সুশাসন ভোটাররা বড় রাস্তার চেয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ইনসাফকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
নির্বাচনি পরিবেশ ইসি-র সক্ষমতা ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ভোটারদের আস্থার মূল ভিত্তি।