Home অন্যান্য ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে

ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে

বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি মূলত মানুষের দূরদর্শিতার অভাব এবং অন্যের বিপদ দেখে অকারণে আনন্দিত হওয়ার বোকামিকে নির্দেশ করে।

আক্ষরিক অর্থ: গোবর শুকিয়ে ‘ঘুঁটে’ তৈরি করা হয় যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যখন ঘুঁটে আগুনে পোড়ানো হয়, তখন পাশে থাকা কাঁচা গোবর তা দেখে হাসে। কিন্তু গোবর এটা বুঝতে পারে না যে, সে নিজেও একদিন শুকিয়ে ঘুঁটে হবে এবং তাকেও একই আগুনেই পুড়তে হবে।

গূঢ় অর্থ: অন্যের বিপদ বা ধ্বংস দেখে যারা আনন্দ পায়, তারা ভুলে যায় যে ভবিষ্যতে তাদেরও একই পরিণতি হতে পারে। অর্থাৎ, নিজের অনিবার্য বিপদের কথা ভুলে অন্যের বর্তমান বিপদ নিয়ে উপহাস করা।

এই প্রবাদটি আমাদের সমাজের একটি নিষ্ঠুর মানসিকতাকে তুলে ধরে। মানুষ যখন দেখে তার কোনো প্রতিপক্ষ বা প্রতিবেশী বিপদে পড়েছে, তখন সে আত্মতুষ্টিতে ভোগে। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতির পরিবর্তন যে কারও জীবনে আসতে পারে—এই চিরন্তন সত্যটি তারা এড়িয়ে যায়। এটি মূলত অদূরদর্শিতা এবং অসংবেদনশীলতার প্রতীক।

১. কর্মক্ষেত্রে উদাহরণ: ধরা যাক, একটি অফিসের একজন প্রবীণ কর্মীকে অদক্ষতার অজুহাতে ছাঁটাই করা হলো। তা দেখে নতুন যোগ দেওয়া এক তরুণ কর্মী খুব হাসাহাসি করছে। তখন অন্য একজন বলতে পারেন— “আজ ওনাকে বের করে দেওয়া হচ্ছে দেখে তুমি হাসছ? মনে রেখো, ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। কাল যখন তোমার বয়স হবে, তোমার সাথেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।”

২. পারিবারিক বা সামাজিক উদাহরণ: কোনো এক প্রতিবেশী ব্যবসায় লস করে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। তা দেখে অন্য এক প্রতিবেশী (যার ব্যবসাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না) আনন্দিত হয়ে পাড়ায় গল্প করছেন। এক্ষেত্রে বলা যায়— “রহিম সাহেবের পতন দেখে করিম মিঞার আনন্দের সীমা নেই। তিনি ভুলে গেছেন ওনার নিজের ব্যবসাও টালমাটাল। একেই বলে ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে।”

‘ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে’ প্রবাদটি আমাদের বিনয়ী হতে এবং অন্যের বিপদে সহানুভূতিশীল হতে শিক্ষা দেয়। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, ভাগ্য পরিবর্তনের চাকা সবার জন্যই ঘোরে; তাই আজ যে পুড়ছে, কাল অন্য কেউ সেই আগুনের শিখায় পড়তে পারে।