শরিফ হাসান:
একুশ শতকের এই তৃতীয় দশকে এসে বিশ্ব অর্থনীতি এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় জমি বা খনিজ তেলকে সম্পদের প্রধান উৎস ধরা হলেও, আধুনিক বিশ্বে সেই স্থান দখল করেছে ‘ডেটা’ বা তথ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালের পর থেকে কর্মসংস্থান বাজারে তারাই টিকে থাকবে, যাদের ঝুলিতে থাকবে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) ধারালো জ্ঞান।
শিল্প বিপ্লবের সময় যেমন তেলের দখল নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো, বর্তমানে ডেটা বা তথ্য ঠিক সেই ভূমিকা পালন করছে। বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—সবার সাফল্যের চাবিকাঠি এখন গ্রাহকের পছন্দ-অপছন্দ বিশ্লেষণ করা।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আপনি আইটি কেন শিখবেন, তার উত্তর সহজ—এটি এখন কেবল একটি দক্ষতা নয়, বরং টিকে থাকার ভাষা।” উচ্চ বেতনের পাশাপাশি চাকরির স্থায়িত্ব এবং বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ আইটিকে করে তুলেছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার।
ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বাজারে নিজের অবস্থান শক্ত করতে হলে প্রথাগত শিক্ষার বাইরেও কিছু বিশেষ কারিগরি দক্ষতায় নজর দিতে হবে। ২০২৫ এবং তার পরবর্তী সময়ের জন্য শীর্ষ ৫টি চাহিদাসম্পন্ন স্কিল হলো:
এআই ও মেশিন লার্নিং: স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা তৈরির কারিগরদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে।
সাইবার সিকিউরিটি: ডিজিটাল অপরাধ বাড়ার সাথে সাথে তথ্য সুরক্ষাকারীদের কদর বাড়বে।
ক্লাউড কম্পিউটিং: হার্ডওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা কমে আসায় ভার্চুয়াল সার্ভার ব্যবস্থাপনায় দক্ষদের জয়জয়কার হবে।
ডেটা সায়েন্স: বিপুল তথ্য থেকে ব্যবসার ভবিষ্যৎ ধারা বের করার ক্ষমতা হবে অন্যতম সেরা যোগ্যতা।
ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট: সফটওয়্যার ও ওয়েব প্রযুক্তির আদি-অন্ত জানা পেশাদারদের চাহিদা কখনোই কমবে না।
রোবটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর উত্থানে সাধারণ কর্মজীবীদের মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন—মেশিন কি মানুষের জায়গা দখল করবে?
ঝুঁকিপূর্ণ পেশা: ডাটা এন্ট্রি, সাধারণ কাস্টমার সার্ভিস, ম্যানুয়াল প্যাকেজিং এবং প্রাথমিক পর্যায়ের হিসাবরক্ষণের মতো কাজগুলো দ্রুতই অটোমেশনের দখলে চলে যাবে।
সুরক্ষিত পেশা: তবে আশার কথা হলো, মানুষের সৃজনশীলতা, সহানুভূতি এবং জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে মেশিন এখনো প্রতিস্থাপন করতে পারেনি। যারা এআই টুল ব্যবহার করে নিজেদের কাজে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবেন, তাদের ক্যারিয়ার আরও বিকশিত হবে। মূলত, ‘এআই মানুষকে প্রতিস্থাপন করবে না, বরং যারা এআই ব্যবহার জানে, তারা তাদের প্রতিস্থাপন করবে যারা জানে না।’
সময় এখন নিজেকে নতুন করে গড়ার। প্রথাগত ক্যারিয়ারের গণ্ডি পেরিয়ে আইটির এই মহাসমুদ্রে নিজেকে দক্ষ নাবিক হিসেবে গড়ে তোলাই হোক আগামীর লক্ষ্য। মনে রাখবেন, প্রযুক্তির এই যুগে পিছিয়ে থাকা মানেই হারিয়ে যাওয়া।










