Home অন্যান্য ডেলিভারি বয়দের পরিশ্রমের আড়ালে যন্ত্রণার গল্প

ডেলিভারি বয়দের পরিশ্রমের আড়ালে যন্ত্রণার গল্প

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: সকাল ১০টা। চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে তীব্র যানজট। ভ্যাপসা গরম আর ধুলোবালির মধ্যে পিঠে বিশালাকার এক ব্যাগ নিয়ে সিগন্যাল ছাড়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ২০ বছর বয়সী তরুণ আরমান। তার স্মার্টফোনে বারবার নোটিফিকেশন বাজছে, পরবর্তী অর্ডারের সময় হয়ে এসেছে। এটি চট্টগ্রামের হাজারো ডেলিভারি বয়ের প্রতিদিনের প্রতিচ্ছবি।

গত কয়েক বছরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনলাইন শপিং এবং ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য, ওষুধ কিংবা ইলেকট্রনিক্স, সবই এখন হাতের মুঠোয়। আর এই সেবাটি গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন কয়েক হাজার ডেলিভারি কর্মী। ফুডপ্যান্ডা, পাঠাও, চালডাল কিংবা রেডএক্সের মতো প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্বলিত ব্যাগ কাঁধে এখন নগরীর অলিতে-গলিতে তাদের বিচরণ।

ঝকঝকে সার্ভিসের আড়ালে এই কর্মীদের জীবন মোটেও সহজ নয়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বেশ কিছু কঠিন বাস্তবতার কথা:

অনিশ্চিত আয়: অধিকাংশ ডেলিভারি বয় ‘কমিশন’ ভিত্তিতে কাজ করেন। অর্থাৎ যত বেশি ডেলিভারি, তত বেশি আয়। ফলে ঝড়-বৃষ্টি বা অসুস্থতা থাকলেও আয়ের টানে তাদের রাস্তায় নামতে হয়।

যানজটের ধকল: চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর ও আগ্রাবাদের মতো এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এতে সঠিক সময়ে ডেলিভারি দেওয়া যেমন কঠিন হয়, তেমনি গ্রাহকের কটু কথা শুনতে হয়।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি: দীর্ঘক্ষণ বাইক বা সাইকেল চালানো এবং পিঠে ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকেরই মেরুদণ্ডে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

নিরাপত্তাহীনতা: সড়ক দুর্ঘটনা এই পেশার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। জীবন বিমা বা পর্যাপ্ত চিকিৎসা ভাতার অভাব অনেক কর্মীকে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় রাখে।

আগ্রাবাদ এলাকায় কাজ করা ডেলিভারি বয় মো. সালাউদ্দিন বলেন, “মানুষ যখন ঘরে বসে বৃষ্টির দিনে গরম খিচুড়ি এনজয় করে, তখন আমাদের বৃষ্টির মধ্যে ভিজে সেই খাবার পৌঁছে দিতে হয়। অনেক সময় কাস্টমাররা দেরি হওয়ার জন্য গালিগালাজ করেন, কিন্তু রাস্তার অবস্থা তারা বুঝতে চান না।”

চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করছে, এই বিশাল কর্মী বাহিনীকে বাদ দিয়ে আধুনিক নগরায়ন কল্পনা করা অসম্ভব। তাই তাদের জন্য নির্দিষ্ট বিশ্রামাগার, উন্নত পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিমার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

চট্টগ্রামের এই ‘অদৃশ্য কারিগররা’ কেবল পণ্যই পৌঁছে দিচ্ছেন না, বরং সচল রাখছেন শহরের অর্থনীতির চাকা। তাদের শ্রমের মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।