Home First Lead আসন সমঝোতায় ফাটল: বিএনপির সঙ্গ ছাড়ল জেএসডি

আসন সমঝোতায় ফাটল: বিএনপির সঙ্গ ছাড়ল জেএসডি

নেপথ্যে লক্ষ্মীপুর-৪

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: নির্বাচনী রাজনীতির মেরুকরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেল বিএনপি ও সমমনাদের জোট। দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় পৌঁছাতে না পেরে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মূলত লক্ষ্মীপুর-৪ আসন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এবং বিএনপির ‘একতরফা’ প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই এই ফাটল তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিরোধের মূলে রয়েছে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনটি। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকায় এবার সেখানে তার স্ত্রী ও দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবকে প্রার্থী করতে চেয়েছিল দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অবস্থান ছিল স্পষ্ট—আ স ম রব নিজে প্রার্থী হলে কোনো শর্ত ছাড়াই তাকে সমর্থন দেওয়া হতো। কিন্তু তানিয়া রবের ক্ষেত্রে বিএনপি ঝুঁকি নিতে চায়নি।

বিকল্প হিসেবে বিএনপি জেএসডি-কে ঢাকা-১৮ আসনটি প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু জেএসডি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাদের পুরনো ঘাঁটিতেই অটল থাকে। সমঝোতা না হওয়ায় বিএনপি ওই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য  এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজানকে মনোনয়ন দেয়, যা জেএসডির ক্ষোভকে চূড়ান্ত রূপ দেয়।

জেএসডি নেতাদের অভিযোগ, জোটবদ্ধ রাজনীতির শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে বিএনপি। দলটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের ভাষ্যমতে, আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা ছাড়াই বিএনপি তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

আসন সমঝোতার নেপথ্য সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জেএসডি শুরুতে তাদের ১১ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি তালিকা বিএনপির কাছে জমা দিয়েছিল। তবে দলটির মূল লক্ষ্য ছিল অন্তত ৪ থেকে ৫টি সম্মানজনক আসনে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা এবং সে অনুযায়ী দরকষাকষি চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু আলোচনার টেবিলে সেই সমঝোতা কাঙ্ক্ষিত রূপ পায়নি। বিশেষ করে ঢাকা-১৮ আসনটি নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হলে বিএনপি জেএসডি-কে সেখানে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেয়, যা জেএসডি প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে বিএনপি ওই আসনে তাদের নিজস্ব প্রার্থী, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়।

পুরো প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের মোড় আসে ২৫শে ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর। তাঁর প্রত্যাবর্তনের পরপরই বিএনপির রাজনৈতিক ও নির্বাচনী কৌশলে দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং ঝুলে থাকা আসন বণ্টন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। এই দ্রুততম সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ায় জেএসডির সঙ্গে আলোচনার পথ সংকুচিত হয়ে আসে, যার ফলে দীর্ঘদিনের মিত্রদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় এবং শেষ পর্যন্ত জেএসডি এককভাবে নির্বাচনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয়।

জেএসডির মতো একটি পুরনো মিত্রের সরে যাওয়া বিএনপির জোটবদ্ধ আন্দোলনে কিছুটা হলেও অস্বস্তি তৈরি করবে। অন্যদিকে, জেএসডি এককভাবে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের শক্তি পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,  জোটের রাজনীতিতে একক আধিপত্য বনাম শরিকদের প্রত্যাশার এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়। তবে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের মতো ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ যখন সামনে চলে আসে, তখন আদর্শিক ঐক্যের চেয়ে আঞ্চলিক আধিপত্যই বড় হয়ে দাঁড়ায়—জেএসডি ও বিএনপির এই বিচ্ছেদ তারই প্রমাণ।