এভিয়েশন ডেস্ক:
বিশ্বের আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তালিকায় যে নামটি সর্বাধিক পরিচিত এবং বহু দেশে ব্যবহৃত হয়, তা হলো F-16A ফাইটিং ফ্যালকন। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বহুমুখী যুদ্ধবিমান কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এর কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করেছে। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার বহু দেশের আকাশরক্ষায় এর উপস্থিতি রয়েছে।
F-16 ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমানটি নির্মাণ করে জেনারেল ডায়নামিকস (বর্তমানে লকহিড মার্টিন)। ১৯৭৪ সালে প্রথম উড়ান সম্পন্ন করে এটি এবং ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। F-16A ছিল এই সিরিজের প্রাথমিক সংস্করণ, যা একক আসনবিশিষ্ট এবং মূলত আকাশ-আক্রমণ ও আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য তৈরি।
তবে কালের পরিক্রমায় এটি রূপ নেয় একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানে, যার সাহায্যে মাটি, সাগর ও আকাশে কার্যকরভাবে আঘাত হানা সম্ভব।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য:
ইঞ্জিন: Pratt & Whitney F100-PW-200
গতি: সর্বোচ্চ ২,১১৭ কিমি/ঘণ্টা (Mach 2+)
সীমা: প্রায় ৪,২০০ কিলোমিটার
অস্ত্র: AIM-9 সাইডউইন্ডার, AIM-120 AMRAAM, বোমা, রকেট, ২০ মিমি কামান
নকশা: বডি হালকা, একক ইঞ্জিন, ফ্লাই-হাই-অ্যাজিলিটি ডিজাইন
ককপিট: আধুনিক গ্লাস ককপিট, হেলমেট-মাউন্টেড টার্গেটিং সিস্টেম (পরবর্তী সংস্করণে)
যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার:
F-16A প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৮১ সালে ইসরায়েলের ‘অপারেশন অপেরা’ অভিযানে, যেখানে ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এরপর এটি অংশ নেয় লেবানন যুদ্ধ, গালফ যুদ্ধ, কসোভো, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও আইএসবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে।
পাকিস্তান বিমানবাহিনী ১৯৮৩ সালে F-16 সংগ্রহ করে এবং এরপর থেকে এটি দেশটির প্রধান আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় এই যুদ্ধবিমান আলোচনায় আসে।
আন্তর্জাতিক ব্যবহার:
বিশ্বের প্রায় ২৫টিরও বেশি দেশ F-16 ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, মিশর, ইসরায়েল, পাকিস্তান, বাহরাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস প্রভৃতি। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪,৫০০-এর বেশি F-16 বিমান তৈরি হয়েছে, যার অনেকগুলো আজও সক্রিয়।
সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতা:
যদিও F-16 অত্যন্ত সফল যুদ্ধবিমান, কিন্তু এটি একটি একক ইঞ্জিনযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় এর নিরাপত্তা নিয়ে মাঝে মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রে ইঞ্জিন বিকল হলে পাইলটের জীবন সংকটে পড়তে পারে। এছাড়া আধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তির তুলনায় এটি কিছুটা পিছিয়ে।
তবুও আধুনিকীকরণ ও ব্লক সংস্করণের মাধ্যমে এই যুদ্ধবিমান এখনও প্রতিযোগিতামূলক।
উপসংহার:
F-16A ফাইটিং ফ্যালকন কেবল একটি যুদ্ধবিমান নয়, এটি আধুনিক যুদ্ধকৌশল, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং বহুমুখীতার প্রতীক। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই বিমান সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে, এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক বছর ধরে এটি বিশ্ব আকাশে গর্জে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।