ইতিহাস গড়ল পাকিস্তান
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামাবাদ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (PIA)-এর মালিকানা এখন বেসরকারি খাতের হাতে। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক রুদ্ধশ্বাস নিলামে ১৩৫ বিলিয়ন (১৩,৫০০ কোটি) রুপির সর্বোচ্চ ডাক দিয়ে পিআইএ-এর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আরিফ হাবিব কনসোর্টিয়াম। গত দুই দশকের মধ্যে এটিই পাকিস্তানের বৃহত্তম বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া।
মঙ্গলবার সকালে ইসলামাবাদে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। শুরুতে তিনটি প্রতিষ্ঠান—লাকি সিমেন্ট, এয়ারব্লু এবং আরিফ হাবিব প্রতিযোগিতায় নামে। সরকারের পক্ষ থেকে পিআইএ-এর ভিত্তি মূল্য (Reference Price) ধরা হয়েছিল ১০০ বিলিয়ন রুপি।
প্রথম রাউন্ডে এয়ারব্লু মাত্র ২৬.৫ বিলিয়ন রুপির প্রস্তাব দিলে তারা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যায়। এরপর মূল লড়াই জমে ওঠে লাকি সিমেন্ট ও আরিফ হাবিবের মধ্যে। লাকি সিমেন্ট ১৩৪ বিলিয়ন রুপি পর্যন্ত দর হাঁকালেও শেষ মুহূর্তে ১৩৫ বিলিয়ন রুপির রেকর্ড প্রস্তাব দিয়ে জয় নিশ্চিত করে আরিফ হাবিব।
নিলাম জেতার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শিল্পপতি আরিফ হাবিব বলেন, “পিআইএ আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। একসময় এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা এয়ারলাইন্স ছিল। আমরা সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই।”
তিনি জানান, তার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো বর্তমানের ১৮টি বিমানের বহর বাড়িয়ে ৩৮টি করা এবং পরবর্তী ধাপে তা ৬৫টিতে উন্নীত করা। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এই দিনটিকে পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য এক ‘ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বলেন, “লোকসানি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বোঝা থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করার যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম, আজ তা বাস্তবায়িত হলো। এই স্বচ্ছ নিলাম প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানান, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে পিআইএ-এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া এই সফল নিলামের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বড় চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ খাকান নাজীব বলেন, পিআইএ-এর দীর্ঘদিনের দেনা ও লোকসান সামাল দিয়ে একে লাভজনক করা এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এই ‘হোয়াইট এলিফ্যান্ট’ বা শ্বেতহস্তী খ্যাত প্রতিষ্ঠানটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, সরকার পিআইএ-এর ৭৫% থেকে ১০০% শেয়ার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করবে। বিনিয়োগের একটি বড় অংশ বিমানের ইঞ্জিন মেরামত এবং নতুন বিমান কেনার কাজে ব্যয় করা হবে।










