Home পরিবেশ কুড়িগ্রামে লোকালয়ে ১০ ফুট দীর্ঘ অজগর

কুড়িগ্রামে লোকালয়ে ১০ ফুট দীর্ঘ অজগর

ছবি সংগৃহীত
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের আগমনী বাজার এলাকায় ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ভেলং নামে এক ব্যক্তির বাড়ির খোকসার গাছে সাপটি শুয়ে থাকতে দেখে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত নারী-পুরুষ ও শিশুসহ উৎসুক জনতা সাপটি দেখতে ভিড় জমায়।

স্থানীয়রা জানান, সকাল ৭টার দিকে গ্রামের কাঁচা সড়ক দিয়ে ক্ষেতে যাওয়ার সময় এক শিশু গাছের গোড়ায় বিশাল আকৃতির সাপটিকে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেয়। আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে আতঙ্কে অজগরটি গাছের ১২ থেকে ১৫ ফুট উঁচুতে উঠে একটি ডালে আশ্রয় নেয়।

গ্রামের মানুষদের ধারণা, এ এলাকায় বনজঙ্গল না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার কারণে পার্শ্ববর্তী ধরলা নদী থেকে সাপটি লোকালয়ে উঠে আসতে পারে। স্থানীয় দুলাল মিয়া বলেন, “এলাকায় আগে কখনও এত বড় অজগর দেখা যায়নি। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।”

পরে খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রীন ভিলেজ ফাউন্ডেশনের সদস্য মো. হোসেন আলী বন্যপ্রাণী উদ্ধারের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী সাপটিকে নিরাপদে বস্তায় ভরে উদ্ধার করেন। এরপর বন বিভাগের সহায়তায় সাপটি অফিসে নেওয়া হয়।

বন বিভাগের সেবাকর্মী আশরাফুল হক জানান, “অজগর সাপটি উদ্ধার করে অফিসে আনা হয়েছে। আলোচনা করে এটিকে নিরাপদ স্থানে প্রকৃত আবাসস্থলে অবমুক্ত করা হবে।”

গ্রীন ভিলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম. রশিদ আলী বলেন, “উদ্ধার হওয়া অজগরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং বয়স আনুমানিক ১০ বছর। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাই কুড়িগ্রামে বন্যপ্রাণী উদ্ধারে আমরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছি।”

এর আগে, শনিবার (৯ আগস্ট) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকিরের চর এলাকা থেকে বন বিভাগের সহযোগিতায় আরও একটি ১০ ফুট দীর্ঘ ও ১৫ কেজি ওজনের অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছিল।

অজগর সাপ সম্পর্কে কিছু তথ্য

অজগর (Python spp.) বিষহীন সাপের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ প্রজাতি। এরা মূলত শক্ত শরীরের জোরে শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে।

বাংলাদেশে সাধারণত ভারতীয় অজগর (Indian Python) বেশি দেখা যায়। এরা বনের গভীরে, নদী–নালা ও জলাশয়ের কাছাকাছি ঝোপঝাড়ে বসবাস করতে পছন্দ করে।

এরা সাধারণত ছোট-বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।

পূর্ণবয়স্ক অজগরের দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং ওজন ৩০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত হয়।

অজগর ধীরে চলাচল করে, তবে শিকার করার সময় হঠাৎ আক্রমণে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, অজগর মানুষের জন্য সরাসরি হুমকি নয়। বরং বনাঞ্চল ও গ্রামীণ পরিবেশে ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN) অজগরকে সংরক্ষণযোগ্য প্রজাতি (Near Threatened) হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।