স্পোর্টস ডেস্ক: ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অলরাউন্ডার ও ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের মেয়ে অনয়া বাঙ্গারের জীবন যেন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। প্রকৃতির নিয়মে তিনি জন্মেছিলেন ছেলের শরীরে, কিন্তু শৈশব থেকেই অনুভব করতেন, তার আত্মা এক নারীর। এই অদৃশ্য দ্বন্দ্বের ভিতরেই কেটেছে তার কৈশোর, কেটেছে বহু প্রশ্ন ও সামাজিক বোঝার সঙ্গে যুদ্ধ করে।
নিজেকে খুঁজে পাওয়ার লড়াই
অনয়া মানসিকভাবে নিজেকে সবসময়ই মেয়ে হিসেবেই চিহ্নিত করতেন। সমাজ, পরিবার ও নিজের ভেতরের যুদ্ধ পেরিয়ে তিনি একদিন বাবাকে জানান, তিনি শরীরের বাইরের রূপটিও মেয়ে হিসেবে গড়তে চান। সঞ্জয় বাঙ্গার, যিনি মাঠে যেমন শান্ত এবং স্থির ছিলেন, কন্যার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান। শুরু হয় চিকিৎসা পর্ব—এক দীর্ঘ, ব্যয়বহুল এবং শারীরিক কষ্টে ভরা লিঙ্গ রূপান্তর প্রক্রিয়া।
বিদেশে জটিল অস্ত্রোপচার
অনয়ার লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে বিদেশে, যেখানে আধুনিক চিকিৎসা ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা মিলেছে একত্রে। এই রূপান্তরের মধ্যে রয়েছে হরমোন থেরাপি, মানসিক কাউন্সেলিং এবং একাধিক জটিল অস্ত্রোপচার। প্রতিটি ধাপে ছিল শারীরিক কষ্ট—হরমোনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সংবেদনশীলতা, ও মানসিক অবসাদও। কিন্তু অনয়া হার মানেননি।
পরিবার ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
অনয়ার এই পরিবর্তনকে ঘিরে সমাজে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছুজন যেখানে তাঁকে প্রশংসা করেছেন সাহসের জন্য, অন্যদিকে কেউ কেউ কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি। কিন্তু তাঁর পাশে ছিলেন বাবা-মা। সঞ্জয় বাঙ্গার বারবার বলেছেন, “আমার সন্তানের সুখই আমার প্রথম প্রাধান্য। সে যেমনভাবে নিজেকে দেখতে চায়, আমি তাকে তেমনভাবেই ভালোবাসি।”
নতুন জীবনের শুরু
এখন অনয়া সম্পূর্ণভাবে একজন বায়োলজিকাল নারী। তাঁর সামাজিক পরিচয়, আইনি নথিপত্র, এমনকি চিকিৎসা নথিও সব বদলে গিয়েছে। কিন্তু বদলায়নি তাঁর মনোবল ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন। অনয়া চান, ভবিষ্যতে এমন মানুষদের জন্য কাজ করতে, যারা সমাজের চোখে ‘ভিন্ন’, অথচ সাহসী।
ছেলেদের ক্রিকেটে শেষ, এবার নজর মেয়েদের দলে
অনয়া ক্রিকেট খেলতেন ছেলেদের বিভাগে। কিন্তু লিঙ্গ পরিবর্তনের পর সেই পরিচয় আর প্রযোজ্য নয়। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই ছাড়তে হয়েছে সেই দুনিয়া। বর্তমানে আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, লিঙ্গ পরিবর্তনের পর কেউ নারীদের ক্রিকেটে খেলতে চাইলে তাকে নির্দিষ্ট হরমোন পর্যায়, চিকিৎসা নথি ও মনস্তাত্ত্বিক রিপোর্ট জমা দিতে হয়। অনয়া সেই নিয়ম মানতে প্রস্তুত।
তিনি ইতিমধ্যে আইসিসি এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের শীর্ষ কর্তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন—তাঁকে যেন নারী ক্রিকেটে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। অনয়া বলেছেন, “ক্রিকেট আমার রক্তে। আমি খেলাটা ছাড়তে পারি না। কিন্তু এখন আমি যেভাবে নিজেকে চিনি, সেই পরিচয়ে খেলতে চাই।”
নিয়মের জটিলতা, তবু অনয়ার আশা
বহু আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থায় ট্রান্সজেন্ডার খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। আইসিসির নির্দিষ্ট প্রটোকল অনুযায়ী, ট্রান্সজেন্ডার নারী খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে অন্তত ১২ মাস টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ধারিত সীমার নিচে রাখতে হয়। এ ছাড়াও, চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট ছাড়পত্র এবং মানসিক সুস্থতার রিপোর্ট প্রয়োজন হয়।
অনয়া অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, এই নিয়মাবলী মানতে তিনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি শুধু চান একটাই—নিজেকে প্রমাণের সুযোগ।