Home Third Lead প্রশাসনের নীরবতায় পথে-প্রান্তরে অপচিকিৎসার হাট

প্রশাসনের নীরবতায় পথে-প্রান্তরে অপচিকিৎসার হাট

চট্টগ্রাম। শহরের রাজপথ,ফুটপাতে এ দৃশ্য চোখে পড়বেই। কেউ যেন দেখার নেই, বলার নেই।

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ত সড়কের ফুটপাত ধরে হাঁটলেই চোখে পড়ে বিচিত্র সব দৃশ্য। একপাশে প্লাস্টিকের চট বসানো, তার ওপরে বসে আছেন এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে বলেন “হাকিম” বা “প্রাকৃতিক চিকিৎসক”। তার সামনে সাজানো গুইসাপের শুকনো দেহ, বেজির খোলস, নানা রকমের শিকড়-বাকড়, শুকনো গাছের ছাল ও অচেনা গুঁড়ো ভর্তি কাচের শিশি। তার পাশেই হ্যান্ডমাইকে ভেসে আসে স্লোগান, “হার্ট ব্লক খুলে যাবে”, “ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে এক রাতেই”, “নারী ও পুরুষের সব রোগের মহৌষধ এখন আমার কাছে!”

এই দৃশ্য আজকাল আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, নিউ মার্কেট, লালদিঘি,  আরাকান সড়ক কিংবা চকবাজার মোড়ে যেন দৈনন্দিন বাস্তবতা। দিনে দিনে এই অপচিকিৎসার ছদ্মবেশে ব্যবসা যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

খোলা আকাশের নিচে চলা এই সব ‘চিকিৎসাকেন্দ্র’ আসলে চিকিৎসার চেয়ে ঢের বেশি ঠকবাজির আখড়া। যেসব গুঁড়ো বা তেল বিক্রি করা হয়, সেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক যাচাই নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন তো দূরের কথা। হ্যান্ডমাইকে একটানা গলা ফাটিয়ে বলা হয়, “বিনাশস্ত্রেই কিডনি ভালো হয়ে যাবে”, “সাতদিনে স্ত্রীর মন জিতে নেওয়ার ওষুধ”, “বয়স ৭০, মনে হবে ২০”।

চট্টগ্রামের আশপাশের গ্রামীণ অঞ্চলের অনেকেই শহরে এসে এসব ‘চিকিৎসা’ গ্রহণ করেন। কারণ, প্রচলিত লোকবিশ্বাস ও গরিব মানুষের চিকিৎসার ব্যয়বহুলতা। ৭০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া এসব ‘ঔষধ’ অনেকেই শেষ আশার মতো গ্রহণ করেন। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই এসব ব্যবহারের পর শরীরের ক্ষতি হয় আরও বেশি।

স্থানীয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না এসব অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে। সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো রাস্তা বা ফুটপাতে এভাবে ব্যবসা চালানোই অবৈধ। তদুপরি স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতারণা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এসব ফুটপাতি তেল, গুঁড়ো খেয়ে প্রতিদিন অনেকেই নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। অনেকে কিডনি বা লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লোক খুবই কম।”

চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষক বলেন, “শহরের প্রগতির ছায়াতেও এমন অন্ধবিশ্বাসের বাণিজ্য চলতে পারে, এটা লজ্জাজনক। প্রশাসনের উচিত এসব ফুটপাতি ‘হাকিমদের’ বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।”

চট্টগ্রামের ফুটপাতে চলা এই অপচিকিৎসা শুধু প্রতারণা নয়, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়ংকর সংকেত। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, জনসচেতনতা এবং আইন প্রয়োগ ছাড়া এই অসুস্থ সংস্কৃতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।