বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া কচ্চপিয়ার পাহাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি বিশেষ অভিযানে ৫ জন অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার করা হয়েছে এবং পরবর্তী অনুসন্ধানে দুইজন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
অভিযান ও উদ্ধার কাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কোস্ট গার্ডের আউটপোস্ট বাহারছড়া গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কচ্চপিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় অপহরণকারীদের লুকিয়ে রাখা গোপন আস্তানা থেকে মুক্তিপণ আদায় বা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে বন্দি রাখা ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় দুইজনকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃতদের পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে কোস্ট গার্ড জানায়।
ঘটনাস্থলের পরিবেশ ও কার্যক্রমের চিত্র
বাহারছড়ার কচ্চপিয়ার পাহাড়ি এলাকা ঘন বনভূমি ও দুর্গম পথের কারণে অপরাধীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পাচারকারী ও অপহরণকারীরা এখানেই গোপন আস্তানা গড়ে তোলে। পাহাড়ি পথ, গভীর বন এবং সমুদ্রতটের নিকটবর্তী অবস্থান অপহরণ ও পাচার চক্রের জন্য এই অঞ্চলকে উপযুক্ত এলাকা করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার অভিযান চালালেও নতুন করে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে—যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
উদ্ধারের খবর স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতার সঞ্চার করেছে। পরিবারগুলো প্রিয়জনকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, টেকনাফ উপকূল ও পাহাড়ি অঞ্চলে এখনো মানবপাচারকারীদের সক্রিয় নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা চায় নিয়মিত টহল ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, যাতে মানুষ পাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ আর মাথা তুলতে না পারে। এনজিও এবং সমাজকর্মীরা উদ্ধারকৃতদের মানসিক সাপোর্ট এবং পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
মানবপাচার—টেকনাফের সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতা ও চ্যালেঞ্জ
টেকনাফ ও কক্সবাজার অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই মানবপাচারকারীদের টার্গেট জোন। বিশেষ করে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে ফাঁদে ফেলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফা অভিযানে বিপুল সংখ্যক অপহৃতকে উদ্ধার এবং একাধিক পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হলেও সমস্যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মূলত সীমান্তবর্তী দারিদ্র্যপীড়িত মানুষরা সহজেই পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে। এ অবস্থায় শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নয়, অর্থনৈতিক বিকল্প ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কর্তৃপক্ষের পাঠানো বার্তা ও পরবর্তী প্রক্রিয়া
কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, আটককৃত দুই অপহরণকারীর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নেটওয়ার্ক ও সহযোগীদের নাম বের করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিবারে ফেরানোর ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
টেকনাফে এ ধরনের অভিযান মানবপাচার ও অপহরণচক্রের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। তবে স্থায়ী সমাধান আসবে তখনই, যখন সীমান্তবর্তী এলাকার জনগোষ্ঠীকে বিকল্প আয়ের সুযোগ, শিক্ষা ও সচেতনতায় সমৃদ্ধ করা যাবে। কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ছাড়া সমস্যার মূল শিকড় নির্মূল করা সম্ভব নয়।